সাবেক ভিসির সন্তানসহ ৬ আত্মীয়ের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও সাবেক উপাচার্য মো. শহীদুর রহমান খানের ছেলে–মেয়েসহ ছয় স্বজনের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে একজন শিক্ষক এবং পাঁচজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের জন্য আগের যে নির্দেশনা ছিল, তার মধ্যে সাবেক উপাচার্যের মেয়ে ছাড়া সবার ক্ষেত্রে তা স্থগিত করা হয়েছে। তবে নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত বাতিল হলেও ২৪ শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিত, ১ জন শিক্ষকের পদোন্নতি বাতিল ও ১ জন শিক্ষকের পদাবনতি করা হয়েছে। আর অন্য ৪৬ শিক্ষক ও ৩ কর্মচারীর নিয়োগের বিষয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত সোমবার ওই নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

যে ছয়জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে, তাঁরা হলেন—সাবেক উপাচার্য শহীদুর রহমান খানের মেয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ইশরাত খান, ছেলে সহকারী রেজিস্ট্রার শফিউর রহমান খান, শ্যালক শাখা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, তিন ভাতিজা কম্পিউটার অপারেটর মো. নিজাম উদ্দিন, মো. মিজানুর রহমান ও ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. ইমরান হোসেন।

যে ২৪ জন শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিত রাখা হয়েছে, তার মধ্যে আছেন ২০ জন প্রভাষক ও ৪ জন সহকারী অধ্যাপক। এ ছাড়া প্রভাষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ফিশারিজ রিসোর্সেস কনজারভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মো. মেহেদী আলমের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের মোহাম্মদ আশিকুল আলমকে সহকারী অধ্যাপকের পরিবর্তে নিয়োগকাল থেকে প্রভাষক হিসেবে পদাবনতি করা হয়েছে। তিনি কম যোগ্যতা নিয়ে ওই পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

মোহাম্মদ আশিকুল আলম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আশা করিনি এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আমরা চাই না কারও চাকরি যাক। এ কারণে সাবেক উপাচার্যের মেয়ের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করা হবে। তা ছাড়া শিক্ষকদের জন্য অন্যান্য যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, সেটিও পূর্নমূল্যায়নের জন্য সিন্ডিকেটের কাছে আবেদন করা হবে।’ তিনি বলেন, ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রেখে শিক্ষকদের ধারাবাহিক যে আন্দোলন চলছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে। কাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুনরায় ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাশেম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার বিকেলে ই-মেইলের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে। এখন ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক মো. শহীদুর রহমান খান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। তাঁর ৪ বছরের মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া ৪৪৭ পদের মধ্যে ছেলে-মেয়ে, শ্যালক, ভাতিজাসহ ৪২৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ বাড়াতে ৪ বছরে ৫ অনুষদের ৪৩ বিভাগ চালু করা হয়।

নিয়োগে অনিয়ম দেখে ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সিন্ডিকেটের পাঁচ সদস্য। ওই বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এক বছরের বেশি সময় পর তদন্ত কমিটি ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৩ আগস্ট উপাচার্যের ছেলে-মেয়েসহ ৯ স্বজন এবং ৭৩ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এর আগে অনিয়ম হওয়ায় কয়েক দফা নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে চিঠি দিয়েছিল ইউজিসি।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১০৬ জন শিক্ষক আছেন। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে আছেন ১৫ জনের মতো শিক্ষক। ২০১৮ সাল থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। বর্তমানে ৪টি ব্যাচে ৪৬৮ জন শিক্ষার্থী আছেন। চলতি শিক্ষাবর্ষে আরও ১৫০ জনের ভর্তির কার্যক্রম চলছে।