সুনামগঞ্জে শুরু হয়েছে হাওর উৎসব

সুনামগঞ্জে হাওর উৎসবের আলোচনা মঞ্চে অতিথিরা। রোববার দুপুরে দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের মাঠেছবি: প্রথম আলো

হাওরাঞ্চলে পলি ব্যবস্থাপনা, মাছ চাষ, বৃক্ষরোপণ ও কমিউনিটি ট্যুরিজমকে উৎসাহিত করতে আজ রোববার সকাল থেকে সুনামগঞ্জে দিনব্যাপী হাওর উৎসব শুরু হয়েছে।

জেলার দিরাই উপজেলার কালনী নদীর তীরের উজানধল গ্রামের মাঠে বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষে এই উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর। উজানধল গ্রামে জন্মেছেন বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম। হাওরের ৭টি জেলার ৪৯টি উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ১ হাজার ২০০ মানুষ এই উৎসবে অংশ নিচ্ছেন।

উৎসবে আছে আলোচনা, আলোকচিত্র প্রদর্শন, অডিও-ভিডিও প্রদর্শন, মাছ চাষ, বৃক্ষরোপণ, গাছের চারা বিতরণ, গম্ভীরা পরিবেশন, হাওরাঞ্চলের মরমি সাধক ও বাউলদের জনপ্রিয় গানের পরিবেশনায় ভাটির গানের আসর ও প্রীতি ফুটবল খেলা।

আজ দুপুরে উৎসবে ‘পলি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশের প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) আবু সেলিম মাহমুদুল হাসান, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পালের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সনজীব সরকার।

মুখ্য আলোচক আখতারুজ্জামান হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর গঠন এবং কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, এই প্রতিষ্ঠান সরকারের সব দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান, প্রকৃতি ও পরিবেশের উন্নয়নে কাজ করছে। হাওরাঞ্চলের মানুষ অবেহলিত, আর্থিকভাবে দুর্বল। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন নিয়ে ভাবতে হবে। মানুষ সচেতন হলে হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশের উন্নয়ন হবে। হাওরাঞ্চলে এখন পলি বড় সমস্যা। উজান থেকে প্রতিবছর এক বিলিয়ন টন পাথর, নুড়ি, বালু নেমে আসে। এতে হাওর, নদী, খাল, জলাভূমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই পলি ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে ৫০ বছর পর বাংলাদেশ মরুভূমি হয়ে যাবে। নদী, হাওর ও জলাভূমির নাব্যতা বাড়াতে হবে। তাহলে মাছ বাড়বে, জলজ উদ্ভিদ বাড়বে। পানি থাকলে পর্যটনের বিকাশ ঘটবে।

আলোচনা পর্বে হাওরাঞ্চলের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন সাত জেলার প্রতিনিধিরা। তাঁরা হাওরপাড়ের মানুষের জীবনমান, প্রকৃতি-পরিবেশের পরিকল্পিত উন্নয়নে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানান। বক্তব্য দেন পৃথক হাওর মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইকবাল হোসেন, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক, স্থানীয় তাড়ল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলী আহমদ, নেত্রকোনার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক হরলাল সরকার, কিশোরগঞ্জের হাওর বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক ইবাদুর রহমান, বাহ্মণবাড়িয়ার শামীম আহমদ, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ  সৈয়দ মোহাম্মদ মহসিন, সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের কৃষক শেখ বাবুল মিয়া, সিলেটের এম এ রহিম, হবিগঞ্জের এম এ বাবুল।

বক্তারা বলেন, জলাভূমি বাংলাদেশর সমৃদ্ধির প্রতীক। হাওরে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা, উন্নয়নে সচেতনতা বাড়াতে হবে। হাওর পর্যটনে যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেটিকে কাজে লাগাতে হবে। তবে পর্যটন হতে হবে প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব। কোনোভাবেই হাওরের ক্ষতি করা যাবে না। নদী খনন, খাল খননের নামে লুটপাট হচ্ছে। এতে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হচ্ছে। অকালবন্যায় প্রায় বছর বোরো ধানের ক্ষতি হয়। হাওরে রয়েছে জীবিকার সংকট। হাওরের মানুষদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ—সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে। হাওর জনপদকে এগিয়ে স্থানীয় মানুষের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা নিতে হবে।