সিলেটে সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ ১৮২ জনের নামে মামলা

মামলাপ্রতীকী ছবি

সিলেটে দুজন সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক ৯ কাউন্সিলরসহ ১৮২ জনের নামে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় সিলেটের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদেরও আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ জনকে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমেনের আদালতে অভিযোগ দেন সিলেট নগরের শিবগঞ্জ খরাদিপাড়া এলাকার সৈয়দ আকরাম আল সাহান (৪২)।

আদালতে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী (সিআর ফাইলিং) মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর আদালত সেটি আমলে নিয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানা-পুলিশকে তদন্ত করার জন্য আদেশ দেন।

মামলায় প্রথম ও তৃতীয় নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত সরকার ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে। দ্বিতীয় আসামি হিসেবে আছেন সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান। এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলরদের মধ্যে আজাদুর রহমান, জগদীশ চন্দ্র দাস, আফতাব হোসেন খান, আবদুর রকিব, রুহেল আহমদ, আবদুল খালিক, আবুল কালাম আজাদ, হুমায়ুন কবির ও ফজলে রাব্বি চৌধুরী রয়েছেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ আগস্ট দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্ট ও সিটি পয়েন্টে আসামিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে পিস্তল, রাইফেল, বন্দুক, কাটা রাইফেল, শটগানসহ নানা ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে হামলা চালান। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে দা, ডেগার, কিরিচ, লম্বা চাকু, লোহার রড ও পাইপ, হকিস্টিকসহ নানা দেশি-বিদেশি অস্ত্র ছিল। তাঁদের হামলায় অনেকে আহত হন। ওই দিনের ঘটনা বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলেও প্রচারও হয়।

মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের পাশাপাশি সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এমসি কলেজ, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগের নেতাদের আসামি করা হয়েছে।

অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক দাস, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল লতিফ, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র প্রমুখ।

সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশ আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত থানায় পৌঁছায়নি। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে মামলায় বিএনপিপন্থী লেখক ও গবেষক হিসেবে পরিচিত জিবলু রহমানকে ৬৩ নম্বর আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে। তিনি সিলেট নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার মৃত শামছুর রহমানের ছেলে।

যোগাযোগ করলে জিবলু রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে আসামি করার বিষয়টি জানা নেই। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমি তাদের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছি। এ জন্য নানা বৈষ্যম্যেরও শিকার হয়েছি। এটা সিলেট শহরের সবারই জানা কথা। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও আমার সমর্থন ছিল। আন্দোলনের পক্ষে সে সময়ে প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরব ছিলাম। কেন আমাকে মামলার আসামি করা হলো, সেটাই তো বুঝে উঠতে পারছি না।’