১০৫ কোটি টাকা নিয়ে এনজিওর কর্মকর্তারা উধাও

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সংবাদ সম্মেলন। আজ শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ৩৫ হাজার গ্রাহকের ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ করেন প্রতারণার শিকার কয়েকজন গ্রাহক।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগরের মো. নাসিমুদ্দীন। এ সময় ভুক্তভোগীদের মধ্যে বক্তব্য দেন বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের তাজকেরা খাতুন, রোকেয়া বেগম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রামকৃষ্ণপুর এলাকার দেলশাদ আলী, নামোশংকরবাটি ঝাপাইপাড়ার মহাজনী বেগম, চরবাসুদেবপুরের রমেশ চন্দ্র দাস।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির নামে নিবন্ধন নিয়ে জেলায় ৪৬টি শাখা খুলে এনজিওটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। প্রতি লাখ টাকা জমা রাখার বিনিময়ে প্রতি মাসে তারা ১ হাজার ২০০ টাকা লাভ ও চাহিবামাত্র জমা রাখা টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে ওই ৩৫ হাজার গ্রাহকের ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান পরিচালকেরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, স্থানীয় সমাজসেবা ও সমবায় অফিসের নিবন্ধন নিয়ে অধিক মুনাফার লোভসহ বিভিন্ন কৌশলে মধুমতির লোকজন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর মধুমতি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ রানা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। এ ঘটনার পর থেকে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার অন্য পরিচালকেরা আত্মগোপনে গেছেন।

ভুক্তভোগীদের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনার পর সম্প্রতি শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে সহস্রাধিক গ্রাহক মানববন্ধন করেন। তাঁদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন কয়েকজন গ্রাহক। মধুমতি গ্রুপের পরিচালকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। উচ্চ আদালত থেকে তাঁদের নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে বলা হলেও তাঁরা হাজিরা দেননি।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থ হারানো মানুষজন তাঁদের আমানতের টাকা আদায়ের লক্ষ্যে প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী রোকেয়া বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, তিনি ১১ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলেন। এখন টাকার অভাবে দুই মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শংকরবাটী-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেলশাদ আলী বলেন, ‘অবসর নেওয়ার পর সরকারের কাছে পাওনা ৩৭ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম মধুমতির কাছে। এখন আমার দুই ছেলে বিদেশে যাওয়ার ভিসা পেয়েছে। কিন্তু তাদের টাকা দিতে পারছি না।’

এ ব্যাপারে মধুমতি গ্রুপের আত্মগোপনে থাকা বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুন ও পরিচালক ফারুক হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত প্রথম আলোকে বলেন, ওই এনজিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা একটি অস্ত্র মামলায় কারাগারে। আমি পরিচালক মাসুদ রানার ভাই ফারুক হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি মধুমতির সঙ্গে জড়িত নন বলে জানান। তখন ভুক্তভোগীদের আদালতের আশ্রয় নিতে বলা হয়।