‘আঁই ক্যানে বাঁইচ্চুম, আঁর বেগিন শেষ’

মো. হেলাল উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদৌস আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কয়েকবার মূর্ছা গেছেন। আর জ্ঞান ফিরলেই শুধু বলছেন, ‘আঁই ক্যানে বাঁইচ্চুম, আঁর বেগিন শেষ।’ (আমি কীভাবে বাঁচব। আমার সব শেষ)। স্বজনেরা জানান, প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় কথা হতো জান্নাতুলের। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র বিয়ে হয় তাঁদের। হাতের মেহেদির রং এখনো রয়ে গেছে।

বিয়ের পর মাত্র চার মাসের দাম্পত্য জীবন তাঁদের। এরপরই জান্নাতুল ফেরদৌসের স্বামী মো. হেলাল উদ্দিন মালয়েশিয়া চলে যান। প্রতিদিনই কয়েক ঘণ্টা মুঠোফোনে কথা হতো তাঁদের। কথার সঙ্গে স্বামীর জন্য প্রতীক্ষাও যেন ফুরাত না। আজ সেই স্বামী ফিরেছেন তাঁর কাছে, তবে লাশ হয়ে।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত তিনটায় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হেলালের ভগ্নিপতি মো. কামরুল ইসলাম তাঁর মরদেহ গ্রহণ করেন। বেলা সাড়ে ১১টার সময় হেলালের মরদেহ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখিল ইউনিয়নের গুইল্যাখালী এলাকার গ্রামের বাড়ি পৌঁছায়। আজ বেলা সাড়ে তিনটার সময় গুইল্যাখালী স্থানীয় জামে মসজিদসংলগ্ন মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। ৭ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে নয়টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয় হেলাল উদ্দিনের। ওই দিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মালয়েশিয়ার বেন্টং এলাকায় একটি নালায় কাজ করার সময় তিনি পাহাড়ধসে আহত হন। হেলাল গুইল্যাখালী এলাকার ছৈয়দুল হকের ছেলে।

হেলাল উদ্দিনের মরদেহ বাড়িতে আনার পর স্বজন–প্রতিবেশীদের ভিড়। আজ বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখিল ইউনিয়নের গুইল্যাখালী এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

হেলালের ভগ্নিপতির কাছ থেকে মুঠোফোনে জানা গেল, বাঁশখালীর গুইল্যাখালী গ্রামের মানুষজন ছয় মাস আগে হেলালের বাড়িতে উৎসবের পরিবেশ দেখেছেন। অনেকে তাঁর বিয়েতেও এসেছিলেন। তাঁদের কাছে জান্নাতুল এখনো নববধূ। সেই জান্নাতুলের হৃদয় নিংড়ানো বিলাপে অশ্রুসজল হয়েছেন গ্রামের সব মানুষ। শোকাতুর গ্রামবাসী ভিড় করেছেন বাড়ির আঙিনায়। শোকে কাতর জান্নাতুলকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দেওয়া যাচ্ছে না। বেলা দেড়টার দিকে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

স্বজনেরা জানান, ১১ বছর ধরে মালয়েশিয়া থাকা হেলাল নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে দেশে এসে বিয়ে করেন। ৪ মাস ছুটি কাটিয়ে গত ৭ জুন আবারও মালয়েশিয়া যান। মালয়েশিয়া যাওয়ার তিন মাসের মাথায় ৭ সেপ্টেম্বর মারা গেলেন তিনি।

২০১২ সালে মা-বাবা ও ছয় ভাই-বোনের অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে বিদেশে পাড়ি দেন মো. হেলাল উদ্দিন। তাঁর উপার্জিত অর্থে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছিল। ভাইকে ওমানে পাঠিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে মা-বাবা মারা গেলে পুরো সংসারের দায়িত্ব হেলালের ওপর এসে পড়ে।

মো. হেলাল উদ্দিনের মামাতো বোন জয়নাব বেগম প্রথম আলোকে বলেন, হেলাল মারা যাওয়ায় পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুরো পরিবারটিও অসহায় হয়ে পড়ল। হেলালের চাচাতো ভাই মো. ইলিয়াছ বলেন, মালয়েশিয়ার বেন্টং এলাকায় থাকতে হেলাল। ৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একটি নালায় কাজ করার সময় তিনি পাহাড়ধসে আহত হন। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।