মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলা: মামলার এক দিন পরও কেউ গ্রেপ্তার নেই
মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের ভক্তদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ বলছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের কাজ চলছে। কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেলেও বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পাওয়া যায়নি।
গতকাল সোমবার বিকেলে সদর থানায় আবুল সরকারের আহত এক ভক্ত বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন। এদিকে এ ঘটনায় আজ বিকেলে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবে ‘জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা’–এর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
মামলার এজাহার ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওরে পালাগানের আসরে বাউলশিল্পী আবুল সরকার ধর্ম অবমাননা করে মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। এর জেরে গত বুধবার রাতে মাদারীপুরে একটি পালাগানের আসর থেকে তাঁকে আটক করে পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার তাঁর বিরুদ্ধে মামলার পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত রোববার সকালে আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন তাঁর ভক্ত-অনুরাগীরা। একই সময়ে ‘জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা’–এর ব্যানারে মানিকগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ বাউলশিল্পী ও ভক্তদের বেলা ১১টার দিকে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়। পরে সকাল ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মিছিল বের করেন ‘আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা’। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণে প্রধান ডাকঘর কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় শহরের দক্ষিণ সেওতা এলাকায় সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণ পাশে প্রায় অর্ধশত ভক্ত-অনুরাগীদের কেউ চা পান করছিলেন, কেউ দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ‘আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা’–এর ব্যানারে থাকা একদল ব্যক্তি লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে বাউলশিল্পী ও ভক্তদের ওপর হামলা করেন। এতে তিনজন ভক্তসহ চারজন আহত হন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। হামলার ভিডিও দেখে আসামিদের পরিচয় নিশ্চিতে তদন্ত চলছে। জড়িত কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পাওয়া যায়নি।
‘আলেম-ওলামাদের’ সংবাদ সম্মেলন
এদিকে ‘জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা’–এর ব্যানারে আজ বিকেলে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য দেন হেফাজত ইসলামের জেলা শাখার সহসভাপতি মুজীবুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান, প্রচার সম্পাদক ওবায়দুল্লাহসহ জেলা ও উপজেলার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রশাসনের উপস্থিতিতে তাঁদের মিছিলটি নির্ধারিত রুট অনুসরণ করে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে জড়ো হয়। কিন্তু আবুল সরকারের অনুসারীরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ ও আশপাশে জটলা পাকিয়ে অবস্থান করছিলেন। এতে সংঘর্ষের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।
লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, ‘নির্বাচনের আগমুহূর্তে দেশকে অশান্ত করতে আওয়ামী লীগের দোসর আবুল সরকার ও তাঁর অনুসারীরা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে এবং নির্ধারিত ভেন্যু বাদ দিয়ে তৌহিদি জনতার ভেন্যুর আশপাশে ঘোরাঘুরি করছিলেন বাউল অনুসারীরা। এতেই প্রমাণিত হয়, সংর্ষের ঘটনার পুরোটাই ছিল তাঁদের পূর্বপরিকল্পিত ও সাজানো। আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ। অচেনা কতিপয় লোকের কারণেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে আলেম-ওলামাদের কেউ জড়িত নন।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হেফাজতে ইসলামের জেলা শাখার সহ–আইনবিষয়ক সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, ‘অনেকেই মনে করছেন, আমরা গান-বাজনা ও বাউলদের বিপক্ষে। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। বাউলরা গান-বাজনা করুক, তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা চাই, তাঁরা গানের আসরে ধর্মীয় ব্যাখ্যা না দিয়ে শুধু গান-বাজনা নিয়েই থাকুক। আর যে ব্যক্তি দোষ করেছে, আমরা শুধু তার বিপক্ষে। তার শাস্তি হোক, আমরা এটাই চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে বাউলদের পক্ষ থেকে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টির সমাধান করার দাবি জানানো হয়। ওই মামলাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হয়রানি করা হলে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।