নকলায় সাংবাদিকের কারাদণ্ডের ঘটনায় তথ্য কমিশনের অনুসন্ধান শেষ

সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা
ছবি: সংগৃহীত

শেরপুরের নকলা উপজেলায় তথ্য না দিয়ে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাংবাদিককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনার অনুসন্ধান শেষ করেছে তথ্য কমিশন। তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম সোমবার দুপুরে এ কার্যক্রম শেষ করে ঢাকায় ফিরে গেছেন।

এদিকে ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর ওই সাজার নথির নকল কপি সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

দেশ রূপান্তর পত্রিকার সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা গত মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু তাঁকে তথ্য না দিয়ে উল্টো দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ওই কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তথ্য কমিশনের পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইনের ধারা ২৫(৫) অনুযায়ী বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য তথ্য কমিশনার শহীদুল আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তথ্য কমিশনার শহীদুল সোমবার সকালে জেলা কারাগারে যান এবং কারাবিধি অনুযায়ী সেখানে আটক সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানার সঙ্গে তিনি (তথ্য কমিশনার) দ্বিতীয় দফায় কথা বলেন। এরপর তথ্য কমিশনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে (ডিসি) গিয়ে ডিসি আবদুল্লাহ আল খায়রুমের সঙ্গে কথা বলেন। মঙ্গলবারের ঘটনার বিষয়ে তিনি ডিসির জবানবন্দি নেন। এরপর সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় তথ্য কমিশনার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।

এর আগে গতকাল রোববার দিনভর অনুসন্ধানের প্রথম দিন তথ্য কমিশনার শহীদুল সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা, তাঁর স্ত্রী বন্যা আক্তার, ছেলে শাহরিয়ার জামান, নকলার ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন ও সাজার নথি দেখেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তথ্য কমিশনার শহীদুল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় ফিরে এ বিষয়ে প্রতিবেদন তথ্য কমিশনে জমা দেবেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ প্রদানের নথির ‘নকল কপি’ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তাঁর পরিবারের পক্ষে দেশ রূপান্তরের শেরপুর জেলা প্রতিনিধি মো. শফিউল আলমের কাছে প্রদান করা হয়েছে।

শফিউল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে সন্ধ্যা সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানার আইনজীবীর মাধ্যমে আগামীকাল মঙ্গলবার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সাজার বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার অনিন্দিতা রানী ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ প্রদানের নথির ‘নকল কপি’ সোমবার সন্ধ্যায় সরবরাহ করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার ইউএনওর দপ্তরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল মুনসুরের সঙ্গে সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা অশোভন আচরণ করায় এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। সোমবার সকালে পৌর শহরের ইশিবপুর এলাকায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।

মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল মুনসুর; নকলার চরঅষ্টধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. গোলাম রব্বানী; জেলা পরিষদের সদস্য সানোয়ার হোসেন; উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান; দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম; বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান; নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোশাররফ হোসেন সরকার; মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মো. খোরশেদ করিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।