দারিদ্র্য ঠেকাতে পারেনি অদম্য ইরানীকে

এসএসসিতে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মেয়ে ইরানী আফরিন
ছবি: প্রথম আলো

প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায় থাকলে যেসব প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, তা প্রমাণ করেছে ইরানী আফরিন। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে সাফল্যের সিঁড়ি আরও এক ধাপ পেরিয়েছে সে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নুরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। এর আগে অষ্টম শ্রেণিতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল ইরানী।

আপাত এই সাফল্যের পেছনে নিদারুণ দারিদ্র্যের গল্প ফেলে এসেছে ইরানী। তাদের কোনো জমিজমা, সম্পদ নেই। বাবা রাজমিস্ত্রির সহকারীর হিসেবে কাজ করেন। আর মা করেন দিনমজুরের কাজ। অনটনের সেই সংসারের দারিদ্র্য ঘোচাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়েছিল মেধাবী ছাত্রী ইরানীকেও। তবুও পড়ালেখার প্রতি তাঁর আগ্রহে ভাটা পড়েনি।

ইরানী আফরিন প্রথম আলোকে বলে, নবম শ্রেণিতে ওঠার পর অভাবের কারণে বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে গেলে বিভাগ পরিবর্তন করতে বলে তার মা–বাবা। তার ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা করে চিকিৎসক হওয়া। তাই স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় পড়াশোনার খরচ জোগাতে সেলাই মেশিনে সে জামাকাপড় সেলাইয়ের কাজ শুরু করে। পাশাপাশি কাজ করত অন্যের বাড়িতে। মা–বাবা ও নিজের আয়ে সংসারের খরচ মিটিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। এ সময় তার সহপাঠী ও শিক্ষকেরা তাকে নানাভাবে সহায়তা করে।

ইরানী আফরিনের মা রেহানা বেগম বলেন, বসতভিটার জায়গা ছাড়া আর জমিজমা নেই তাঁদের। বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী খেতে-খামারে কাজ করে খুব কষ্টে সংসার চালান। সংসারের খরচ বাঁচিয়ে ইরানীর লেখাপড়ার কিছুটা জোগানো হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। বাধ্য হয়ে তাঁর মেয়ে এত কম বয়সে মা–বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করেছে। কাজের পাশাপাশি ভালো ফলাফল করে তাঁদের ঋণী করেছে।

ইরানীর শিক্ষক হারুন-অর রশিদ বলেন, অভাব কিংবা দারিদ্র্য যে ইচ্ছাশক্তির কাছে পরাজিত হয় তার উদাহরণ ইরানি। যথাযথ পরিবেশ পেলে মেধাবী এ শিক্ষার্থী সমাজ ও দেশের জন্য কল্যাণ নিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন এ শিক্ষক।