পিরোজপুরে জেলা পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সালমা রহমানের সমর্থনে মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ১৪৬ জনপ্রতিনিধির (ভোটার) মধ্যে ৯১ জন অনুপস্থিত ছিলেন। রোববার দুপুরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে এ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সালমা রহমান পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়ালের সেজ ভাই সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের স্ত্রী। সালমা রহমানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ। সালমা রহমানকে বিজয়ী করতে পুরো আউয়াল পরিবার মাঠে নেমেছে। শুক্রবার থেকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সালমা রহমানের পক্ষে দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ও বর্ধিত সভা শুরু করেছেন। শুক্রবার রাতে সালমা রহমানের বাসভবনে পিরোজপুর সদর উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় ১০৭ জনপ্রতিনিধির মধ্যে ৯৫ জন উপস্থিত ছিলেন। গত শনিবার দুপুরে নেছারাবাদ উপজেলায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ১৪৬ জনপ্রতিনিধির মধ্যে ১২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। তবে ব্যতিক্রম ঘটেছে রোববার দুপুরে মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায়। এতে ইউপির ১১ চেয়ারম্যানের মধ্যে মাত্র ২ জন উপস্থিত ছিলেন। ১৪৬ জনপ্রতিনিধির মধ্যে ৫৫ জন উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলের একাংশের নেতারা সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, ‘আমার স্ত্রী জেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য প্রার্থী হওয়ায় আমি তাঁর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে পিরোজপুরে ছিলাম।’ তবে দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, মঠবাড়িয়া আওয়ামী লীগ দুইভাবে বিভক্ত। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিউদ্দিন ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান পক্ষ বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকায় তাঁদের প্রতিপক্ষরা ওই সভা বর্জন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, আশরাফুর রহমান দলের বেশির ভাগ চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন। আশরাফুর রহমানের আয়োজনে হওয়া বর্ধিত সভায় বেশির ভাগ ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য বর্জন করেন। যাঁরা গেছেন, তাঁদের মধ্যে ২৬ জন সভার পুরো সময়ে সেখানে ছিলেন। বাকিরা ভয়ে শুধু হাজিরা দিয়ে চলে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল বলেন, দলের বর্ধিত সভায় যাঁরা উপস্থিত হননি, তাঁদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সালমা রহমানের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী মহিউদ্দিন মহারাজ। ২০১৬ সালে জেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহ আলমকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ চেয়ারম্যান হন। আউয়ালের মেজ ভাই হাবিবুর রহমান পিরোজপুর পৌরসভার টানা চারবারের মেয়র। সেজ ভাই মজিবুর রহমান সদর উপজেলা পরিষদের পরপর দুইবার চেয়ারম্যান হন। এবার জেলা পরিষদের মনোনয়ন পেলেন মজিবুর রহমানের স্ত্রী সালমা রহমান। সালমার আছে দলীয় ও পারিবারিক প্রভাব। আর মহারাজের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা। নির্বাচনে দুজনের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
এদিকে ৩ সেপ্টেম্বর ভান্ডারিয়া উপজেলার হরিণপালা ইকোপার্কে মহিউদ্দিন মহারাজের দায়িত্ব পালনের মেয়াদপূর্তি উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় জেলা পরিষদের ৭৪৭ জন ভোটারের মধ্যে ৬৮০ জন যোগ দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সালমা রহমান, মহিউদ্দিন মহারাজসহ চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বৈধতা পেয়েছেন।