পটুয়াখালীতে রোগী বাড়ছে

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড। গত শুক্রবার তোলা ছবি
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীতে দিন দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অধিকাংশই ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসার পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৩ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় ১৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে শয্যা না পেয়ে অনেকে সাধারণ ওয়ার্ডে শয্যা নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত জেলায় ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

গত শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের একটি অংশে এখন ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা একটি ওয়ার্ড করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডে ২২টি শয্যা থাকলেও শুক্রবার হাসপাতালে ২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন।

বাকি চারজন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে দুজন হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে, একজন মেডিসিন ওয়ার্ড ও একজন পেয়িং বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে শয্যা না থাকায় সাধারণ ওয়ার্ডে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে প্রবেশ করেই দেখা যায়, অনেক রোগীই মশারি না টাঙিয়ে সেবা নিচ্ছেন। সেবিকারা বার বার রোগীদের মশারি টাঙাতে বলছেন। সংবাদকর্মীদের দেখে রোগীদের স্বজনেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মশারি টানাতে।

ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কথা হয় মো. এমরানের (২৬) সঙ্গে। এমরান ঢাকাতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। জেলার বাউফল উপজেলার আদাবাড়ীয়া গ্রামের এমরান ঈদুল আজহা উপলক্ষে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। ১ জুলাই বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন এমরান। পরে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ৫ জুলাই এমরান এই হাসপাতালে ভর্তি হন। এমরানের পাশে তাঁর মা শাহানুর বেগম বসে আছেন। মশারি না টানালে ডেঙ্গু অন্যের শরীরে ছড়াতে পারে, তারপরও মশারি কেন টাঙান নি জানতে চাইলে এমরান বলেন, ওয়ার্ড রোগীতে ভর্তি, প্রচন্ড গরম। তাই অনেকেই মশারি টানান নি।

ডেঙ্গু ওয়ার্ডে মো. ইলিয়াস (২৫) নামে এক রোগী শয্যায় নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছেন। ইলিয়াস চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা ইফতা বিভাগের শিক্ষার্থী। ঈদের ছুটিতে জেলার সদর উপজেলার ছোট বিঘাই ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে আসেন। সকালে ঈদের নামাজ পড়ার পর জ্বর জ্বর অনুভব করেন। তবে ওই জ্বর স্বাভাবিকের মতো ছিল না। মাথায় যন্ত্রণা, পুরো শরীর ব্যথাসহ বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। পরে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন, তাঁর ডেঙ্গু হয়েছে। ৫ জুলাই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

পাশের শয্যায় দেখা যায়, জেলার সদর উপজেলার লোহালিয়া গ্রামের জাফর ঘরামী (৩৫) মশারির মধ্যে বসে আছেন। তার পাশে স্ত্রী রাশিদা বেগম (৩০) ও আড়াই মাসের শিশুকন্যা পাপিয়াকে নিয়ে বসে আছেন। পুরো ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। অনেকেই মশারি টানাচ্ছেন না। এই অবস্থায় শিশুকন্যাকে নিয়ে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে অবস্থান করছেন।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক দিলরুবা ইয়াসমিন বলেন, ঈদের পরপরই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড করা হলেও এখন সেখানে জায়গা হচ্ছে না। তাই নতুন ডেঙ্গু ওয়ার্ড করে শয্যার সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।