রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর লাশ ভৈরবে গ্রামের বাড়িতে

বেলা ১১টার দিকে কাদিরের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ কিশোরগঞ্জের ভৈরবের রঘুনাথপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রাবাসের দরজা ভেঙে উদ্ধার করা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এস এম আবদুল কাদির ওরফে শরিফের লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পৌঁছেছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আবদুল কাদিরের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি ভৈরব উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে পৌঁছায়। এ সময় সেখানে কাদিরের স্বজন ও গ্রামবাসীর আহাজারিতে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এর আগে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে আবদুল কাদিরের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তাঁর বিভাগের সহপাঠীসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সযোগে কাদিরের লাশ নিয়ে তাঁর স্বজন, সহপাঠী ও শিক্ষকেরা ভৈরবের উদ্দেশে রওনা দেন।

আরও পড়ুন

আবদুল কাদির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মোখলেছুর রহমান। গতকাল দুপুরে রাজশাহী নগরের অক্ট্রয় মোড় এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে ঘরের দরজা ভেঙে কাদিরের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ফলিত গণিত বিভাগের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী গেছেন। কাদিরের সহপাঠী ইসমাইল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবারও তাঁরা কয়েকজন মিলে ফুটবল খেলেছেন। এর আগে কাদিরের কোনো অসুস্থতা দেখা যায়নি। কাদিরকে তাঁরা সব সময় হাসিখুশি থাকতে দেখেছেন। ক্লাস-পরীক্ষাতেও নিয়মিত ছিলেন। কাদিরের গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়স্বজনেরা তাঁর এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের ধারণা, কাদির হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারেন।

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. আতিকুর রহমান বলেন, তাঁরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কাদিরের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছেন। বেলা ১১টার দিকে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাদির পরিবারের একমাত্র ছেলে। তাঁর তিন বোন আছে। কাদিরের বাবা একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তাঁর মা গৃহিণী। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তাঁরা দিশেহারা।
কাদিরের পরিবারে লোকজন বলেন, মেধাবী ছাত্র হিসেবে গ্রামজুড়ে কাদিরের পরিচিতি ছিল। তিনি ভালো ফুটবলও খেলতেন। প্রযুক্তিসংক্রান্ত জ্ঞান থাকায় গ্রামের মানুষ কাদিরের কাছে কম্পিউটার ও মুঠোফোন সমস্যা সমাধানের জন্য আসতেন। তিনিও সাধ্যমতো সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতেন। শুক্রবার কাদিরের এক বোনের বিয়ে হয়। তবে পরীক্ষার জন্য তখন আসতে পারেননি কাদির। কথা ছিল, পরীক্ষা শেষ হলেই বাড়িতে আসবেন।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কাদিরের মা বিলকিস বেগম শয্যাশায়ী। বাবা মোখলেছুর রহমান চোখ পানি মুছতে মুছতে বলেন, ‘বিয়েতে এলে ছেলেডারে দেখতে পাইতাম।’ এরপর আর তিনি কোনো কথা বলতে পারেননি। কেবল নিঃশব্দে কেঁদেছেন।

রাজশাহী নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাদিরের লাশ ময়নাতদন্ত না করার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতের কাদিরের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।