অক্সিজেন না পাওয়ায় ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালে স্বজনদের বিক্ষোভ

পান ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে স্বজনদের বিক্ষোভ। গতকাল রোববার মাদারীপুর জেলা হাসপাতালেছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে সময় মতো অক্সিজেন না দেওয়ায় এক পান ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে শ্যামল দাশ (৫৫) নামের ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর হাসপাতালে বিক্ষোভ করেন স্বজনেরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মারা যাওয়া শ্যামল দাস মাদারীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকার রামজীবন দাসের ছেলে। তিনি পুরানবাজার এলাকার পান ব্যবসায়ী।

স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, মেরুদণ্ডে তীব্র ব্যথা নিয়ে গতকাল বিকেলে পাঁচটার দিকে মাদারীপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন শ্যামল দাস। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রিয়াদ মাহমুদ ব্যবস্থাপত্র দিয়ে তাঁকে হাসপাতাল ভবনের ছয়তলায় ভর্তি হওয়ার নির্দেশনা দেন। সেখানে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখে রোগীকে ব্যথার ইনজেকশন দেন কর্তব্যরত নার্স। পরে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। স্বজনদের অভিযোগ, অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করতে থাকেন শ্যামল দাস। এ সময় নার্স সুজাতাকে অক্সিজেনের কথা বললে ব্যস্ততা দেখিয়ে অন্য কাজে মনোযোগ দেন। এরপর রাত আটটার দিকে মারা যান শ্যামল।

শ্যামল দাশ
ছবি: সংগৃহীত

এরপর চিকিৎসার অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ তুলে রাতেই হাসপাতালে বিক্ষোভ করেন স্বজনেরা। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শ্যামল দাসের ছোট ভাই শংকর দাস অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাঁর ভাইকে ঠিকঠাক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। রোগীর প্রতি কোনো যত্ন নেই এখানে। নামমাত্র চিকিৎসা। চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর ভাই মারা গেছেন। এই ঘটনার বিচার চান তাঁরা।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হচ্ছে, এমন খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরবর্তী সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ ব্যাপারে নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মাদারীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজীব মাহমুদ বলেন, শুধু অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তবে অব্যবস্থাপনা এখানে দৃশ্যমান। যে নার্স দায়িত্ব অবহেলা করেছেন, তাঁর বিচার ও হাসপাতাল থেকে অপসারণ চান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে নার্স সুজাতার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ধরেননি। সন্ধ্যায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক রিয়াদ মাহমুদ বলেন, সঠিকভাবেই নিচতলার জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শ্যামল দাসকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময় ভবনের ছয়তলায় কী হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি জানেন না।

জানতে জাইলে সিভিল সার্জন ও মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মুনীর আহম্মেদ খান বলেন, হাসপাতাল থেকে মুঠোফোনে বিষয়টি চিকিৎসক তাঁকে জানিয়েছেন। কী ঘটনা ঘটেছে, সবকিছুই পর্যলোচনা করে নার্সের অবহেলা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।