খাগড়াছড়িতে গুলিতে তিনজনের মৃত্যু

খাগড়াছড়ির গুইমারার রমেসু বাজারের কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়। বাজারে পুড়ে যাওয়া একটি মোটরসাইকেল। আজ দুপুরেছবি: ভিডিও থেকে

খাগড়াছড়ির গুইমারায় গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। গুলিতে তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবিব পলাশ।

আজ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গুইমারায় গুলিতে তিনজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের লাশ হাসপাতালে রয়েছে। তবে কার গুলিতে কীভাবে মারা গেছে, বিস্তারিত জানা যায়নি। তিনি আরও বলেন, গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আরও তিনজন আহত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ সাবের আজ রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, গুইমারা থেকে তিনজন পুরুষের লাশ এসেছে খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালে। তাঁদের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার সকালে ময়নাতদন্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে গুইমারা থেকে আনা আহত চারজন চিকিৎসাধীন।

এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে যেটা হলো, আমার কাছে ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক মনে হচ্ছে। ১৪৪ ধারা জারির পরও এমন ঘটনা ঘটার কথা ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী তিনজনের বেশি মানুষ জড়োই হতে পারবে না। অথচ সেখানে দল বেঁধে মানুষ মিছিল করেছে। আমি বলব, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় নেতৃত্ব—উভয়েরই ইমম্যাচিওর (অপরিণত) আচরণের জন্য এটা হয়েছে। কেউ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেনি।’

পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র ব্যানারে গতকাল শনিবার ভোর পাঁচটা থেকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ রোববার সকালে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা।

গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে ওই কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র ব্যানারে অবরোধ চলাকালে আজ দুপুরে গুইমারার একটি বাজারে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুনে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়। এ সময় বাজারের পাশে থাকা বসতঘরও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ বেলা একটায় খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

বাজারটি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে। বাজারে আগুন দেওয়ার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে আগুনে বাজারের দোকানপাট জ্বলতে দেখা যায়। বাজারের দোকানমালিকদের অধিকাংশ পাহাড়ি বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল আছে। এর আগে দুপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে অবরোধের সমর্থনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলির শব্দ শোনা যায়। এ ঘটনায় অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মংসাজাই মারমা ও কংজরী মারমা জানান, অবরোধের সমর্থনে তাঁরা খাদ্যগুদামের সামনের সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এলে তাঁদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের ওপর গুলি করেন বলে অভিযোগ করেন এই দুজন। তাঁরা বলেন, গুলির পরপরই লোকজন ভয়ে দিগ্‌বিদিক পালিয়ে যান। এরপর ২০-২৫ জন লোক এসে রামেসু বাজার ও বসতবাড়ি লুটপাট করে এবং যাওয়ার সময় আগুন ধরিয়ে দেন। এসব লোকের সঙ্গে মুখোশ পরা লোকও ছিল। এ সময় দোকানপাট ও বসতবাড়ির সঙ্গে অনেকগুলো মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

খাগড়াছড়ির গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, অবরোধ নিয়ে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে ঝামেলা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও ঝামেলা হয়। এখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে খাগড়াছড়ি শহরে আজ সকাল থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরের মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে। বাজার ও বাজারের আশপাশে কোনো দোকানপাট খোলেনি। প্রয়োজনীয় কাজে যাঁরা বের হচ্ছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে নিরাপত্তা বাহিনী।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ

এই দুঃখ প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় বলা হয়েছে, খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিনজন পাহাড়ি নিহত, মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিনজন পুলিশ সদস্য এবং আরও অনেকে আহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অতি শিগগির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে আশ্বস্ত করা হয়েছে। সে পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধরে শান্ত থাকার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।