‘ফিরে চল মাটির টানে’ স্লোগানে প্রথমবার ব্রজমোহন কলেজে নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত

সরকারি ব্রজমোহন কলেজের সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের আয়োজনে ধানের ছড়া কেটে নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। ক্যাম্পাসের কবি জীবনানন্দ মঞ্চে বাংলার কৃষিভিত্তিক ঐতিহ্য, লোকজ জীবন ও গ্রামীণ সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী উৎবের আয়োজন করা হয়ছবি: প্রথম আলো

বরিশালে সরকারি ব্রজমোহন কলেজে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো নবান্ন উৎসব-১৪৩২। আজ বুধবার দিনভর এই উৎসবের আয়োজন করে কলেজের সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন। এবারের এই উৎসবের মূল স্লোগান ‘ফিরে চল মাটির টানে’। বাংলা কৃষিভিত্তিক সমাজ, লোকজ জীবন ও গ্রামীণ সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী এই বর্ণিল আয়োজন সাজানো হয়।

কলেজের কবি জীবনানন্দ মঞ্চে (মুক্তমঞ্চ) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে নবান্ন উদ্‌যাপনের নানা পর্ব। এর মধ্যে ছিল শোভাযাত্রা, লোকগীতি ও ঐতিহ্যবাহী আচার, লোকজ খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পুরো ক্যাম্পাসে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।

সকালে সাড়ে ৯টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব। উদ্বোধনী পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি ব্রজমোহন কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জাবের আহমেদ। এ সময় বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘লোকসংস্কৃতি নানা চাপের মুখে টিকে আছে, এই চাপ ও ভয়ের পরিবেশ আমাদের সংস্কৃতির জন্য একটি বড় হুমকি। শিক্ষার্থীদের শিকড়ের দিকে ফিরে তাকানোর এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, প্রশংসনীয়।’

নবান্ন উৎসবে এসে ছবি তুলে আনন্দে মেতেছে শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের নানা সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

নবান্ন উৎসব আয়োজনকারী সংগঠন সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক কাজী মারজান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাউলসহ বিভিন্ন লোকশিল্পীর ওপর যে আক্রমণ হচ্ছে, তা আমাদের লোকসংস্কৃতির জন্য ভয়াবহ হুমকি। নবান্ন উৎসবের মাধ্যমে আমরা শেকড়, মাটি ও মানুষের গানের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার কথা নতুন করে স্মরণ করাতে চাই।’

সরকারি ব্রজমোহন কলেজে নবান্ন উৎসব পালন করে শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের কবি জীবনানন্দ মঞ্চে দিনব্যাপী উৎসবে নৃত্য পরিবেশন করছেন এক শিক্ষার্থী
ছবি: প্রথম আলো

লোকসংস্কৃতিকে একটি জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ উল্লেখ করে কাজী মারজান জানান, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একটি জাতির গৌরব, ইতিহাস, ঐতিহ্য। যে জাতির লোকজ সংস্কৃতি যত গভীর, সেই জাতি ততটাই উন্নত ও সমৃদ্ধ। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাংলা সংস্কৃতির শিকড় হচ্ছে এই লোকজ সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকে আমরা সুরক্ষা দিতে না পারলে আমরা জাতি হিসেবে অন্তসারশূন্য হয়ে পড়ব। তাই আমাদের যার যার অবস্থান থেকে এই সংস্কৃতিকে লালন ও সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।’

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। পরে অনুষ্ঠিত হয় গ্রামীণ রীতি-অনুষ্ঠান, লোকনৃত্য, গান ও আবৃত্তি। বিকেল পর্যন্ত চলে লোকজ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

আয়োজকদের ভাষ্য, এই উৎসব শুধু বিনোদনের আয়োজন নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে লোকজ সংস্কৃতি, কৃষিভিত্তিক সমাজ ও শেকড়ের ইতিহাসচর্চা ফিরিয়ে আনার একটি প্রয়াস। নিয়মিত আয়োজনের মাধ্যমে নবান্ন উৎসব ব্রজমোহন কলেজের একটি স্থায়ী সাংস্কৃতিক ধারায় রূপ নেবে, এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন আয়োজকেরা।