প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশ ঘিরে ব্যানার-ফেস্টুন-তোরণের নগরী রংপুর
রংপুর নগরের সড়ক-মহাসড়ক ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে গেছে। শহরজুড়ে প্রচারণা হচ্ছে ভাওয়াইয়া, জারি-সারি আর ভাটিয়ালি গানের সুরে। জেলা স্কুলের মাঠে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে রংপুর মহানগরীতে এখন সাজ সাজ অবস্থা।
প্রায় সাড়ে চার বছর পর আগামীকাল বুধবার রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে যোগ দিতে রংপুরে আসছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর রংপুরের দুটি উপজেলায় নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে এ জেলায় এসেছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ সমাবেশের কারণে বিভাগের আট জেলায় দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আরও উজ্জীবিত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ সফল করতে তাঁরা দফায় দফায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটানোর আশা তাঁদের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর সফর ঘিরে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রী যে পথে সমাবেশস্থলে যাবেন, সেই পথের চেকপোস্ট থেকে সভামঞ্চ পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে ফুটপাতে রং করা হয়েছে। পথের ধুলাবালু সরানোর কাজও শেষ হয়েছে। সমাবেশস্থল জিলা স্কুলের চারদিকের সীমানাপ্রাচীর সাদা কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সার্কিট হাউস ও আশপাশের এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে।
রংপুর জিলা স্কুল মাঠে ইতিমধ্যে মহাসমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, এস এম কামালসহ দলের অন্য নেতা-কর্মীরা।
এ ছাড়া বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে স্বাগত জানিয়ে আনন্দমিছিল করেছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। মিছিল থেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দসহ দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানানো হয়।।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, পদ্মা সেতু যদি দেশের টাকায় নির্মাণ করা সম্ভব হয়, তাহলে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরুল আনাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন। বিগত সময়ে তিনি নিজ দায়িত্বে এ এলাকার উন্নয়ন করেছেন। তবে দেশের অন্য অঞ্চলের থেকে রংপুর কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।
সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি (সনাক) সদরুল আলম বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষিভিত্তিক রপ্তানিনির্ভর কলকারখানা নির্মাণ, রংপুর-ঢাকা দিবাকালীন আন্তনগর ট্রেন চালু, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা, অর্থনৈতিক জোন তৈরি।
মহাসমাবেশে রংপুর বিভাগের ৫৮টি উপজেলা থেকে মানুষ উপস্থিত হবেন বলে জানিয়েছেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ কে এম ছায়াদত হোসেন। তিনি বলেন, মহাসমাবেশ সফল করতে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় বর্ধিত সভাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা সবাই সমাবেশ সফল করতে বিভিন্নভাবে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখানে উন্নয়নমূলক কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে উত্তরের জনপদ জেগে উঠেছে।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাঁর সফরসূচি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-১ ইসমাত মাহমুদা। সফরসূচি থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেবেন। হেলিকপ্টার বেলা দুইটায় রংপুর ক্যান্টনমেন্ট হেলিপ্যাডে অবতরণ করবে। পরে বেলা ২টা ৫ মিনিটে ক্যান্টনমেন্ট হেলিপ্যাড থেকে সড়কপথে রংপুর সার্কিট হাউসের উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বেলা ২টা ১৫ মিনিটে সার্কিট হাউসে পৌঁছে সার্কিট হাউসের মিলনায়তনে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী রংপুর জিলা স্কুল মাঠের জনসভার উদ্দেশে রওনা দেবেন। বেলা ৩টা ৫ মিনিটে জিলা স্কুল মাঠের মহাসমাবেশে উপস্থিত হবেন তিনি। পরে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে মহাসমাবেশে বক্তব্য শেষ করে তিনি ক্যান্টনমেন্ট হেলিপ্যাডের উদ্দেশে সড়কপথে রওনা দেবেন। পরে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।