বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বগুড়া জেলা আহ্বায়ক কমিটি বাতিলে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্প্রতি ঘোষিত বগুড়া জেলা আহ্বায়ক কমিটি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাতিলের সময়সীমা বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়েছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। আজ শনিবার বিকেলে বগুড়া জিলা স্কুলফটকে সংবাদ সম্মেলন করে এই আলটিমেটাম দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে চাঁদাবাজ, অছাত্র, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লেজুড়বৃত্তিতে জড়িত বলে অভিযোগ তুলে ‘বিতর্কিত কমিটি’ বাতিল না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
বিতর্কিতদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে চারজন শিক্ষার্থী পদত্যাগেরও ঘোষণা দিয়েছেন। ওই চারজন হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুশফিকুর রহমান, শাহরিয়ার সীমান্ত, সংগঠক তৌকি তাহমিন ও শাহ সুলতান।
সংবাদ সম্মেলনে বগুড়া জিলা স্কুল, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। যাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সক্রিয় ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তৌকি তাহমিন বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বগুড়া জেলা শাখার ৩৩৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে চাঁদাবাজ, অছাত্র, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লেজুড়বৃত্তিতে জড়িত, বিতর্কিত এবং জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না—এমন কিছু ব্যক্তিকে পদ দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। অথচ ৫ আগস্টের আগে জুলাই আন্দোলনে তাঁকে কোথাও দেখা যায়নি। তিনি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, এ রকম কোনো ভিডিও ফুটেজেও কেউ দেখাতে পারবেন না। কমিটির সদস্যসচিবের পদ দেওয়া হয়েছে সাকিব খান নামের একজন চাঁদাবাজকে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সাকিব খান ৫ আগস্টের পর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে বগুড়ার এশিয়া সুইটসমিট নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিনা মূল্যে দই ও মিষ্টি নেওয়া ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে দই-মিষ্টি নেওয়ার স্বীকারোক্তির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন। অথচ বিতর্কিত সেই সাকিব খানকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বগুড়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে প্রকৃত আন্দোলনকারীদের বাদ দিয়ে চাঁদাবাজ ও ভুঁইফোড়দের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আন্দোলনে যুক্ত আহত ব্যক্তিদের মতামতও নেওয়া হয়নি। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার খোঁজখবরও নেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি বাতিল করা না হলে আমরা আবার মাঠে নামব। ফ্যাসিস্ট থেকে আর কোনো নতুন ফ্যাসিজম তৈরি হতে দেব না।’
‘কোনো দই-মিষ্টিচোর, চাঁদাবাজের কমিটিতে আমরা থাকতে চাই না’ বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন সংগঠকের পদ পাওয়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী শাহ সুলতান।
বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মোবাশ্বের করিম বলেন, সাকিব খানের বিরুদ্ধে একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনা ফাঁস হয়েছে। এ রকম চাঁদাবাজকে রেখে বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কোনো কমিটি হবে না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সাকিব খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘৭ জুলাই থেকেই বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি। এই নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আমার ব্যবসায়ী বাবাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তুলে নিয়ে ভয়ভীতিও দেখিয়েছিল। কমিটিতে সদস্যসচিবের পদ দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি আমাকে যথাযথ মূল্যায়ন করেছে।’
সাকিব খান আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা বগুড়ার দই-মিষ্টি খেতে চেয়েছিলেন। এশিয়া সুইটস নিজ থেকেই বিনা মূল্যে দই-মিষ্টি দিয়েছিল। এ নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় পর মূল্য পরিশোধ করেছি। ওই সময় কিছু শিক্ষার্থী আমার বাবাকে জিম্মি করে দই-মিষ্টি নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করেছিল। চাঁদাবাজির অভিযোগ সঠিক ছিল না।’
গত ৩০ জানুয়ারি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বগুড়া জেলা কমিটি অনুমোদন দেন। এতে সরকারি আজিজুল হক কলেজের মাহমুদুল হাসানকে আহ্বায়ক ও সরকারি শাহ সুলতান কলেজের সাকিব খানকে সদস্যসচিব করা হয়। গাবতলীর সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের আজিম উদ্দিনকে মুখ্য সংগঠক ও সরকারি আজিজুল হক কলেজের মো. আইয়ুবকে মুখপাত্র পদ দেওয়া হয়। ছয় মাস মেয়াদি কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্যসচিব রাখা হয়েছে ২৬ জন করে। ২৫ জনকে সংগঠক এবং ২৫৪ জনকে সদস্য করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বগুড়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বগুড়া আদালতের আইনজীবী ইজাজ আল ওয়াসী। তিনি বলেন, বগুড়ায় স্বঘোষিত সমন্বয়ক পরিচয়ে নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চলছে চাঁদাবাজি ও প্রতারণা।