কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ, পদত্যাগের দাবি শিক্ষার্থীদের
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঁঞার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টা শহরতলির ধর্মপুরে কলেজের ডিগ্রি-অনার্স ক্যাম্পাসের মসজিদে অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা। রাত সোয়া ১১টার দিকে পুলিশের নিরাপত্তায় অধ্যক্ষ বাসায় ফিরে যান।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার তাঁরা কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেছিলেন। সেই দাবি পূরণ হয়নি। এ জন্য অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁকে মসজিদে ঘেরাও করে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। বারবার চাপ দিয়েও অধ্যক্ষ পদত্যাগপত্র দেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে কলেজে আর আসবেন না, বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাবেন।
গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা তুজ জোহরা এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানজিনা জাহান। তাঁরা দুজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানান। পরে কুমিল্লা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল মালিক ও কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তাঁরা অধ্যক্ষকে পুলিশি নিরাপত্তায় বাসায় পৌঁছে দেন।
অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঁঞার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। পরে অধ্যক্ষকে পুলিশি নিরাপত্তায় বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা ৯ দফা দাবি উত্থাপন করে কলেজ প্রশাসনকে দুই কার্যদিবস সময় দিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা গতকাল দুপুরে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তবে বৈঠকে আশ্বাসমূলক বক্তব্য বা সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পেয়ে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে বৈঠক বর্জন করেন এবং বিক্ষোভে নামেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, ডিগ্রি শাখার জন্য পৃথক আধুনিক ক্যাম্পাস, সিসিটিভি ও লাইটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত, পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, বাস সার্ভিস চালু, জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয় পানি ও আধুনিক ওয়াশরুমের ব্যবস্থা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ফান্ড গঠন এবং সব আয়ের হিসাব ওয়েবসাইটে প্রকাশ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মফিদুল হাসান বলেন, ‘অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যার সমাধান করেন না। আমরা তাঁর পদত্যাগ চাই।’ জাহিদুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা শুনেছি, ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। হলের ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কোনো শিক্ষক থাকেন, এটা প্রথম শুনলাম। মেয়েরা কথা বললে তাঁদের শোকজ, অভিভাবক ডাকায়, বৈঠকের ভয় দেখানো হয়। ৯ দফার কোনো দাবিই মানা হয়নি; বরং আমাদের নিরাপত্তাহীনতায় রাখা হচ্ছে। আমরা অধ্যক্ষের অপসারণ চাই। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থী তামিমের ওপর ছাত্রলীগের হামলার এক বছর পার হলেও প্রশাসন তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। এটা সবার সামনে ঘটেছে, মিডিয়াতেও এসেছে। তাহলে এত গোপনীয়তা কেন?’
সুলতানা নাসরিন নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হলে পানি নেই, কথা বললেও সমাধান নেই। ৯ দফা দাবি জানিয়েও সমাধান নেই। তাই আমরা এই অধ্যক্ষকে চাই না।’