‘অনির্দিষ্টকাল’ বন্ধ ২৫ কারখানা

পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিশ। গতকাল গাজীপুরের কোনাবাড়ীর তুষুকা কারখানায়
প্রথম আলো

শ্রমিক বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় গাজীপুরের কোনাবাড়ী ও ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার ২৫টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং একটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। ওই দুই মামলায় অজ্ঞাতনামা ১১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

বেতন বাড়ানোর দাবিতে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পোশাকশ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে আসছিলেন। এরপর গত মঙ্গলবার ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকার। ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করে বুধ ও বৃহস্পতিবার গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের সময় কারখানা ও গাড়ি ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিক-পুলিশ পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে সাভারের আশুলিয়ায়ও।

গতকাল ছুটির দিনে গাজীপুর ও আশুলিয়ায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ হয়নি।

কারখানার ফটকে বন্ধের বিজ্ঞপ্তি

শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় গাজীপুরের কোনাবাড়ী, জরুন, কাশিমপুর ও ভোগড়া এলাকায় ১৪টি পোশাক তৈরির কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে গাজীপুরের বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ ছিল। সেগুলো আজ শনিবার খোলা হতে পারে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মো. রেজাউল বলেন, গাজীপুরে ২ হাজার ২৩১টি পোশাক কারখানা আছে। এর মধ্যে শুক্রবার ২৪৫টি কারখানা চালু ছিল। বন্ধ ছিল ১ হাজার ৯৮৬টি। এর মধ্যে ১৪টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা হয়তো কারখানা চালু করবে।

গতকাল সকালে কোনাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবারের হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুষুকা কারখানা। কারখানাটির সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তুষুকা জিনস লি., তুষুকা ট্রাউজার্স লি., তুষুকা প্রসেসিং লি., তুষুকা প্যাকেজিং লি. ও নিডেল আর্ট এমব্রয়ডারি লিমিটেডের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের জানানো যাচ্ছে যে বৃহস্পতিবার অজ্ঞাতনামা কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কর্মকর্তাদের মারধর করে, কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এমতাবস্থায় কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কারখানার মহাব্যবস্থাপক মাসুম হোসেন বলেন, অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে কারখানা খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

এ ছাড়া কোনাবাড়ীর আমবাগ রোডের এমএম নিটওয়্যার লিমিটেড ও কোনাবাড়ী জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের তিনটি কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বুধবার শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় ইসলাম গ্রুপের নারী শ্রমিক মোসা. আঞ্জুয়ারা খাতুন মারা যান।

এদিকে গতকাল আশুলিয়ার কাঠগড়া, বড় রাঙামাটিয়া, নরসিংপুর, নিশ্চিন্তপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি কারখানার মূল ফটকে টাঙানো হয়েছে বন্ধের নোটিশ।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত (গতকাল রাত সাড়ে ৯টা) ১১টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এক মামলায় ১১ জন গ্রেপ্তার

গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিল্পাঞ্চলে একটি কারখানার বাইরে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ একটি মামলা করেন। এই মামলায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলায় ওই ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আজিজুল হক (২৬), মো. রনি (২৮), ফেরদৌস আলম (৩৫), নুর আলম (৩০), মো. হেলাল (২৬), ওবাইদুল্লা খান (২০), মো. হানিফ (৩১), মো. মাসুদ রানা (৪৭), আসাদুজ্জামান আসাদ (২০), মো. আবু সাইদ (২৩) ও মো. খলিল (৩৫)।

মামলার বাদী আবু সাঈদ বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে কোনাবাড়ী এলাকায় তুষুকা কারখানার ভেতর শ্রমিকেরা ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এ সময় ওই কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে থাকা গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনারের (ডিসি) গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা সবাই বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। তিনি জানান, গতকাল গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে গত বুধবার কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় ইসলাম গ্রুপের একটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের পর ভাঙচুরের ঘটনায় কাশিমপুর থানার এসআই ছানির হাসান খান বৃহস্পতিবার রাতে আরেকটি মামলা করেন। এতে ৬ থেকে ৭ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।