কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিককে মারধর, প্রেসক্লাবের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কিছু শিক্ষার্থীর হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন বাকৃবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক জনকণ্ঠের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রায়হান আবিদ। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভবনের মিনি কনফারেন্স রুমের পেছনে এ ঘটনা ঘটে। বাগ্বিতণ্ডার জেরে অতীতে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলে তাঁকে মারধর করা হয় বলে জানা গেছে। রায়হান আবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
এদিকে এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাংবাদিক রায়হান আবিদের সংগঠন ‘বাকৃবি প্রেসক্লাব’-এর কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করার আদেশ জারি করেছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. হেলাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক আদেশনামায় এই নির্দেশ জারি করা হয়। আদেশনামায় বলা হয়, বাকৃবি প্রেসক্লাব (বাউপিসি) নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত সাংবাদিক সংগঠনের কতিপয় সদস্যদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য থাকায় এবং সাংবাদিক সংগঠন হিসেবে ফেসবুক পেজ, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এমন নিউজ প্রকাশ করার পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদনকালীন প্রচলিত শর্তাদির ১ ও ৪ নম্বর ধারা ভঙ্গ হয়। এ কারণে সংগঠনটির অনুমতিসংক্রান্ত আদেশনামা স্থগিত করা হলো।
মারধরের ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী বলেন, টিএসসি মিনি কনফারেন্স রুমে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম চলছিল। ওই সময় রায়হান আবিদ বারবার ওই কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন তাঁর কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় ওই শিক্ষার্থীরা অতীতে তাঁর নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে এনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে শিক্ষার্থীরা তাঁকে চড়থাপ্পড় দিতে শুরু করেন।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের এক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তৃতীয় বর্ষে থাকতেই রায়হান আবিদ হলে ওঠেন। তখন থেকেই হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা হয়। নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে সর্বত্র ক্ষমতা দেখাতেন তিনি। আবিদ হলের নিয়ম মানতেন না এবং জোর করে হলের সিঙ্গেল রুম দখলের চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরা তাঁকে হল থেকে বের করে দিতে চাইলে বাকৃবি প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. সহিদুজ্জামানের সহযোগিতায় হলে থাকার সুযোগ পান তিনি।’
ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিক রায়হান আবিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে আকস্মিকভাবে কোনো কারণ ছাড়াই ৭ থেকে ৮ জন এসে মারতে থাকেন। যাঁরা আমাকে মেরেছেন, তাঁদের সঙ্গে আমার কোনো বাগ্বিতণ্ডা বা কোনো ঝামেলা হয়নি। কেন আমাকে মারলেন, সেটা বুঝতে পারছি না। আমি এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছি। ডাক্তার আমাকে দুইটা পরীক্ষা দিয়েছেন। আমি এক কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না।’
ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘আমি ভর্তি কার্যক্রমে মিনি কনফারেন্স রুমের ভেতরে ব্যস্ত ছিলাম। দুপুরের দিকে টিএসসি কক্ষের বাইরের দিকে একটা হট্টগোল শুনতে পাই। আমাদের সহকারী প্রক্টর সেখানে যান এবং কয়েক মুহূর্ত পরেই ফিরে আসেন। সেখানে ঠিক কী হয়েছে, আমার জানা নেই।’