হবিগঞ্জ শহরে এক মাসে ৮ দোকানে চুরি 

চোরদের টার্গেট মুঠোফোনের দোকান। একটি দোকানে তিনবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

হবিগঞ্জ শহরে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা বেড়েছে। এর মধ্যে এক দোকানে গত সাত মাসে তিনবার চুরি হয়েছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এসব চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে না পারায় ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ ও প্রতিবাদ-সমাবেশ করছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক মাসে হবিগঞ্জ শহরে আটটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। মুঠোফোনের দোকানগুলো বেশি টার্গেট চোরদের। এক মাসে যে আটটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ছয়টিই মুঠোফোনের দোকান। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে শহরের টাউন হল এলাকায় গেজেট হবিগঞ্জ নামের মুঠোফোনের দোকানের ওপরের টিন কেটে সাড়ে তিন লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়। একই দোকানে ৬ মার্চ এবং গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর একই রকমের চুরির ঘটনা ঘটে। দুইবার চোরেরা প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় ওই সময়। সব কটি ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাফাত চৌধুরী থানায় মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন।

২০ মার্চ শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত জিসান টেলিকম নামের দোকান থেকে দুই-তিন লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়। শহরের টাউন হল এলাকায় অবস্থিত সিটি টেলিকমের ওপরের সিলিং কেটে চোরেরা প্রবেশ করে ওই মুঠোফোনের দোকানের দুই লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এ ছাড়া শহরের টাউন হল রোড এলাকায় অবস্থিত মুঠোফোনের দোকান অপ্পোর শোরুমে গত ৬ মার্চ, একই দিনে রিয়েলমির শোরুমে, ১৪ মার্চ শহরের সবুজবাগ এলাকায় মা আইটি সেন্টার এবং টাউন হল রোডের লাকি ফার্মেসিতে চুরি হয়।

সব কটি দোকানই শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। ব্যবসায়ীদের দাবি, দোকানগুলো শহরের প্রধান সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত হওয়ার কারণে দোকানগুলোর পেছন থেকে টিন বা সিলিং কেটে সহজে চুরি করা যায়। তবে কোনো চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনতে গত শনি ও রোববার শহরের প্রধান সড়কের টাউন হল এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় রাস্তার দুই পাশে যানবাহন আটকে শহরজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীদের এ আন্দোলনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করেন। পরে পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে চুরির রহস্য উদ্‌ঘাটনের বিষয়ে আশ্বস্ত করলে আন্দোলনকারীরা তাঁদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

গেজেট হবিগঞ্জ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আরাফাত চৌধুরী বলেন, ‘আমার দোকানটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। এর আশপাশে দুই-তিনটি বড় মার্কেট রয়েছে। তাঁদের নিরাপত্তাপ্রহরী আছে। এর ভেতরেই গত ছয় মাসে আমার দোকানে তিনবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ রাতে শহরের টহল দেয় না, যে কারণে আমরা এ ধরনের চুরির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

হবিগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর দেওয়ান বলেন, ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে গিয়ে ঠেকেছে। অথচ পুলিশ একটি চুরির ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি। যে কারণে চুরির ঘটনা বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন, ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। 

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) খলিলুর রহমানের দাবি, চুরির ঘটনাগুলোতে কেউ কেউ মামলা করেছেন, আবার অনেকেই মামলা করেননি। যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁদের চুরির ঘটনায় পুলিশ রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে। শহরে নিরাপত্তা জোরদার বাড়ানো হয়েছে। 

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নিরাপত্তার দায়িত্ব শুধু পুলিশের নয়, ব্যবসায়ীদের উচিত নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হওয়া। তাঁরা কোটি টাকার ব্যবসা করবেন, অথচ নৈশপ্রহরী নিয়োগ বা সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করবেন না, তা হয় না।’