ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘ঐক্যজোট গোষ্ঠী’ ও ‘মহাজোট গোষ্ঠীর’ সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ৩৫

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শহরতলীর বিরাসার এলাকায় এ সংঘর্ষ চলেছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন, এর মধ্যে ৫ জন পুলিশের সদস্য রয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরতলীর বিরাসার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একজনকে গ্রেপ্তার ও পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাটাই উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবু সাঈদ জানান, ‘জুয়া খেলা নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত। গতকাল সোমবার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। বিরাসার এলাকার বড়গোষ্ঠীগুলো সংঘর্ষে জড়িত হয়েছে।’

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরতলীর বিরাসার এলাকার বাসিন্দা জেলা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক বাবুল মিয়ার গোষ্ঠী ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল কাশেম মাস্টারের গোষ্ঠী এলাকায় ‘বড় গোষ্ঠী’ বা ‘ঐক্যজোট গোষ্ঠী’ হিসেবে পরিচিত। একই এলাকার বাসিন্দা নাটাই উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি তাজ মো. ইয়াছিনের গোষ্ঠী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার কাউন্সিলর মিজানুর রহমান আনসারির গোষ্ঠী ও সৈয়দ আলীর গোষ্ঠী এলাকায় ‘মহাজোট গোষ্ঠী’ হিসেবে পরিচিত। গত রোববার রাতে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে বিরাসার গ্রামের পশ্চিমপাড়ার ঐক্যজোট গোষ্ঠীর আল-আমিনের সঙ্গে একই এলাকার মহাজোট গোষ্ঠীর লোক হিসেবে পরিচিত মো. নূরুল্লাহ ও সুজন মিয়ার কথা–কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার রাতেই দ্বন্দ্বের জেরে ঐক্যজোট গোষ্ঠীর কয়েকজন প্রতিপক্ষ মহাজোট গোষ্ঠীর মহিদ মিয়ার ছেলেকে বাড়ির ফটকের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যান। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে অহিদ মিয়া নামের একজনকে মারধর করেন ঐক্যজোট গোষ্ঠীর লোকজন। এ নিয়ে গতকাল দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় মহাজোট গোষ্ঠীর একজনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

এর জেরে আজ সকালে উভয় পক্ষ রামদা, ছুরি, বল্লম, দা, লাঠিসোঁটাসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে ঐক্যজোট গোষ্ঠীর একজন আহত হয়ে মারা গেছেন বলে এলাকায় খবর প্রচার হয়। এতে সংঘর্ষ আরও বাড়তে থাকে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১০টি বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশ লাইনস থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিপেটা, ৩টি কাঁদানো গ্যাসের শেল ও ১৪টি রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সোহেলসহ ৫ পুলিশ সদস্য এবং উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

পৌর কাউন্সিলর মিজানুর রহমান আনসারি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার দিন ধরে এলাকায় যেতে পারছি না। বিরাসার এলাকার একটি খাল খনন নিয়ে এক মাস ধরে এলাকায় সংঘর্ষের রেশ চলছিল। বড় গোষ্ঠীর (ঐক্যজোট) লোকজন পায়ে পাড়া দিয়ে আমাদের মহাজোট গোষ্ঠীর সঙ্গে ঝগড়া করেছে।’ একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ঐক্যজোট গোষ্ঠীর বাবুল মিয়া এবং কাশেম মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে ৩টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ১৪টি রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তাজা ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। গুলি করার সময় একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচটি গুলি, একটি ম্যাগাজিনসহ বড়গোষ্ঠীর জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় পাঁচ দাঙ্গাবাজকে আটক করা হয়েছে।