এমওপি সার পাচ্ছে না কৃষক

  • চারা রোপণের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে খেতে এমওপি সার ব্যবহার করতে হয়।

  • কৃষক খেতে এমওপির বিকল্প হিসেবে ডিএপি ব্যবহার করতে পারেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকেরা চাহিদামতো মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার পাচ্ছেন না। গত বুধবার পর্যন্ত চলতি মাসের বরাদ্দের মাত্র ৪৪ শতাংশ এমওপি সার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থার (বিএডিসি) গুদাম থেকে উত্তোলন করেছেন পরিবেশকেরা। এ অবস্থায় কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে।

কৃষকেরা বলেন, এখন খেতে এমওপি সার ব্যবহারের সঠিক সময়। এমওপি সার দিতে না পারলে গাছ শক্ত হবে না এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।

বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এমওপি সারের কোনো সংকট নেই। পরিবহনকাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের গুদামে নিয়মিত সার আসছে না। ফলে তাঁরা পরিবেশকদেরও চাহিদামতো সার বরাদ্দ দিতে পারছেন না।

পরিবহনকাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে জেলার গুদামে নিয়মিত সার আসছে না বলে জানিয়েছেন বিএডিসির কর্মকর্তারা।

চলতি আমন মৌসুমে আগস্ট মাসের জন্য জেলায় ১ হাজার ৯০১ মেট্রিক টন এমওপি, ১ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও ১ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ৮৪৬ মেট্রিক টন এমওপি, ৭৯৮ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন টিএসপি ও ৫৩৮ মেট্রিক টন ডিএপি সার উত্তোলন করেছেন পরিবেশকেরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁওয়ে চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যা থেকে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, জুলাইয়ের শুরু থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত আমন মৌসুম। আমন ধানের চারা রোপণের সময় মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শ অনুযায়ী, আমন খেতে দুই কিস্তিতে ইউরিয়া ছাড়া অন্য সার ব্যবহার করতে হয়। প্রথমটি চারা রোপণের আগে জমি তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে আর দ্বিতীয়টি চারা রোপণের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে। ইউরিয়া ছাড়া অন্য সারের মধ্যে একটি হচ্ছে এমওপি। এখন এমওপি সার ব্যবহারের উপযুক্ত সময়। কৃষক এমওপির বিকল্প হিসেবে ডিএপি ব্যবহার করতে পারেন।

সদর উপজেলার রাজাগাঁও গ্রামের কৃষক আবদুর রউফ বলেন, অন্য সব সার পাওয়া গেলেও এমওপি সার পাওয়া যাচ্ছে না। পরে ৭৫০ টাকার সারের বস্তা (৫০ কেজি) ১ হাজার ৭০০ টাকায় কিনতে হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার সাতটি দোকান ঘুরে এমওপি সার পাওয়া যায়নি। পৌর শহরের ঐশী বীজ ভান্ডারের মালিক ও বিএডিসির সার পরিবেশক এনামুল হক বলেন, চাহিদা অনুযায়ী এমওপি সার পাচ্ছেন না। এখন রবিশস্যের মৌসুম। এখন যেখানে হাজার বস্তা সারের চাহিদা রয়েছে, সেখানে তাঁরা পাচ্ছেন দুই টন করে। তা–ও আবার অনিয়মিত। ১৪ আগস্ট তাঁর পরিচালিত তিনটি লাইসেন্সের বিপরীতে ৩০০ বস্তা (দেড় মেট্রিক টন) এমওপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

হরিপুরের পরিবেশক লিমা ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক জান্নাতুল ইসলাম বলেন, ‘এ মাসের ২ তারিখ দুই টন এমওপি পেয়েছিলাম। উত্তোলনের পর হাতে দুই দিনও থাকেনি। এখন কৃষককে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’

বিএডিসি ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক (সার) আবদুল আহাদ বলেন, এমওপি সারের পর্যাপ্ত মজুত আছে। বিদেশ থেকে সার আমদানি করে ছোট জাহাজে করে খুলনা এবং যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় আনা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের পর থেকে সেখান থেকে ৩৫টি জেলার গুদামে সার পরিবহন করেন ঠিকাদারেরা। কিন্তু পরিবহন ঠিকাদারেরা তিন থেকে চার দিন পর পর এক ট্রাক এমওপি সার গুদামে পৌঁছে দিচ্ছেন। এতে পরিবেশকেরা চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে পারছেন না।

জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এমওপি সারের সংকট নেই। তবে সার পরিবহন কিছুটা অনিয়মিত। তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।