ইউএনওর কাছে অভিযোগ করে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকাল কিশোরী নাজমিন

নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করে সাহসী ভূমিকা রাখায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাজমিন আক্তারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। বুধবার দুপুরে পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা গ্রামে কদমতলা বালিকা দাখিল মাদ্রাসায়
ছবি: প্রথম আলো

নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মাদ্রাসার ছাত্রী নাজমিন আক্তারকে (১৫) বরপক্ষ দেখতে আসবে। বরপক্ষের পছন্দ হলেই হবে বিয়ে। বরপক্ষ দেখতে আসার খবর শুনে মেয়েটি পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে গিয়ে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকাতে লিখিত আবেদন করে আসে।

এরপর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ইউএনও আহমেদ সাব্বির বলেন, ‘গতকাল বিকেলে ওই ছাত্রীর বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য তার লিখিত আবেদন আমি ডাক ফাইলে পাই। এরপর দ্রুত মেয়েটির বাল্যবিবাহ বন্ধে ব্যবস্থা নিই। নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে মেয়েটির উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’

প্রশাসন, মেয়েটির পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কদমতলা গ্রামের শ্রমিক মোতালেব খানের মেয়ে নাজমিন আক্তার স্থানীয় কদমতলা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী। গতকাল নাজমিন জানতে পারে, তাকে বরপক্ষ দেখতে আসবে। এরপর বিকেলে সে ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিতে লিখিত আবেদন করে। ইউএনও আহমেদ সাব্বির লিখিত আবেদনটি হাতে পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফাকে মেয়েটির বাড়িতে পাঠান। সন্ধ্যায় মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা কদমতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিহাব হোসেন শেখকে নিয়ে মেয়েটির বাড়িতে যান।

মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আমি মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে বুঝিয়েছি। মেয়েটির বাবা তার মেয়ের ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।’

মেয়েটির বাবা মোতালেব খান এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি ভুল বুঝতে পেরেছি। মেয়ের উপযুক্ত বয়স না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিব না।’

নাজমিন আক্তার বলে, ‘বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে আমাদের শিক্ষকেরা বলতেন। আমি নিজের জীবনকে বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে বাঁচাতে পেরে খুশি।’

কদমতলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মুহা. আজাহার উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের বাল্যবিবাহ রোধে প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সময়ে সচেতন করা হচ্ছিল। আমাদের ছাত্রী নাজমিন আক্তার আমাকে যখন জানাল, তার বাল্যবিবাহের প্রস্তুতি চলছে। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটিকে লিখিত আবেদন নিয়ে ইউএনওর কাছে যাওয়ার জন্য বলি। মেয়েটি সচেতন ছিল বলেই তার বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।’