আম কেনাবেচার দৃশ্য। রোববার দুপুরে রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর বাজারে আমের দাম গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে আসায় ও অন্যান্য বছরের তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আমের দাম বাড়তি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহীর বাজারে এখন আশ্বিনা ছাড়া অন্য কোনো আম নেই। অন্য জাতের আম নওগাঁর সাপাহার থেকে এনে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন।

এবার শুরু থেকেই রাজশাহীর আমের বাজার চড়া ছিল। আমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর যে টাকায় তিন মণ আম বিক্রি হয়েছে, এবার একই টাকায় বিক্রি হচ্ছে দুই মণ আম।

এবার আমের মুকুল গত বছরের চেয়ে ২১ শতাংশ কম হয়েছে জানিয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এর আগে এক মৌসুমে আমের বিক্রি ৭০০–৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থেকেছে। এবার বাড়তি দামের কারণে তা ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ওই অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। সেই হিসাবে চাষের এলাকা বেড়েছে ৫৭২ হেক্টর। গত বছর এ জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন।

এবার সেখানে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। নতুন করে এ বছর জেলার বাগমারা, দুর্গাপুর ও গোদাগাড়ী এলাকায় আমের চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। চাষের জমি বাড়লেও ফলন হয়েছে কম।

রাজশাহীর প্রধান আমের বাজার বসে জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। ভরা মৌসুমে এই বাজার বানেশ্বর সরকারি কলেজ মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেখানে বিশেষ ছাউনি তৈরি করে এর নিচে আমের বাজার বসেছে। এ ছাড়া খোলা মাঠে ভ্যানের ওপরেও আম কেনাবেচা হয়েছে। শেষের দিকে আমের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজার আবার বানেশ্বর কাচারি মাঠে নিয়ে আসা হয়।

গতকাল রোববার দুপুরে বানেশ্বরের ওই মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ব্যবসায়ীরা আম বেচাকেনা করছেন। এই বাজারে ফজলি ও বারি-৪ আম সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা মণ, আশ্বিনা ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ এবং আম্রপালি ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

‘ফ্রুটস হান্ট’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে দেশে ও দেশের বাইরে আম সরবরাহ করে থাকেন টাঙ্গাইলের অনলাইন আম ব্যবসায়ী জুয়েল মামুন। বানেশ্বর বাজারে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এবার একদিকে আমের সরবরাহ কম, অন্যদিকে চাহিদা বেশি—এ কারণে আমের দাম বাড়তি। গত বছরের চেয়ে এবার যেকোনো আম মণে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

জুয়েল মামুন আরও বলেন, আশ্বিনা আম গত বছর ৬০০–৭০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। শেষের দিকে খুব বেশি হলে ১ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। লক্ষ্মা আম গত বছর ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি বিক্রি হয়নি। এবার সেই আম ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরেও বিক্রি হয়েছে।

এবার আমের বাজার চড়া হওয়ায় চাষিরা ভালো দাম পেয়েছেন জানিয়ে বানেশ্বর বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা যা ছিল, সেটা অর্জিত হয়েছে। রাজশাহীতে এখন সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ আশ্বিনা আম রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাপাহার থেকে আম এনে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এবার মুকুল কম হলেও আম উৎপাদনে তাঁরা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি চলে গেছেন।