চাকরির কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ, বরখাস্ত অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে বরখাস্ত হওয়া অফিস সহায়ক হালিমা খাতুন ও তাঁর স্বামী মুক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় মাদারীপুরে মামলাটি করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান।

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় হালিমা ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দুজনের কাছ থেকে সাড়ে ২০ লাখ টাকা ও গ্রাম পুলিশে নিয়োগ দেওয়ার কথা দুজনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। হালিমা শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার তারুলিয়া গ্রামের মোক্তার হোসেনে স্ত্রী।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোসাইরহাট ইউএনও কার্যালয়ে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন হালিমা। ২০১৯ সালে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে ১৯ জন কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিলে গোসাইরহাটের নাগেরপাড়া এলাকার খাদিজা আক্তার ও তাঁর ভাই নাজমুল হক আবেদন করেন। তখন অফিস সহায়ক হালিমা চাকরি দেওয়ার কথা বলে দুজনের কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা নেন এবং তৎকালীন জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে অফিস সহায়ক পদের দুটি নিয়োগপত্র দেন। দুই ভাইবোন যোগদান করতে গিয়ে বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তখন তাঁরা লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানান।

ওই ঘটনার পর হালিমাকে ডামুড্যায় বদলি ও সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত শুরু করে জেলা প্রশাসন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাঁকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়। ২০২১ সালে খাদিজা আক্তার বাদী হয়ে হালিমা খাতুন, তাঁর বাবা আলী আহম্মেদ আকন ও তাঁর স্বামী মুক্তার হোসেনকে আসামি করে আদালতে প্রতারণার মামলা করেন। এ ছাড়া গ্রাম পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে রুমা আক্তার ও সুমন ব্যাপারী নামের দুজনের থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন হালিমা। ওই সব ঘটনা তদন্ত শুরু করে দুদক। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মামলার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

ভুক্তভোগী খাদিজা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকা দিলে চাকরির প্রলোভনে পড়ে হালিমাকে ২৪ লাখ টাকা দিয়েছি। তিনি আমাদের নকল যোগদানপত্র দেন। প্রতারণার শিকার হয়েছি বুঝতে পেরে অভিযোগ করি। তখন সাড়ে ৩ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছিল। সাড়ে ২০ লাখ টাকা এখনো আদায় করতে পারিনি। ঋণ করে ও পরিবারের গয়না বিক্রি করে টাকা দিয়েছিলাম। এখন অসহায় জীবন যাপন করছি।’

মামলা ও অভিযোগের বিষয়ে হালিমা খাতুনের কাছে যোগাযোগ করলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

দুদকের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারী টাকা আত্মসাৎ করায় জেলা প্রশাসক তাঁকে বরখাস্ত করেছেন। ওই ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন তাঁর স্বামী। দুদকের উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।