ভালো ফলনে খুশি কৃষক 

গ্রীষ্মকালে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়। এ কারণে কৃষি বিভাগ গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের পরীক্ষামূলক চাষ করে সাফল্য পেয়েছে। 

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক কবির হোসেনের পেঁয়াজখেত পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিনতে আজিজ। সম্প্রতি তোলা
ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গায় গ্রীষ্মকালীন (নাসিক এন-৫৩) পেঁয়াজ চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় গত বছর থেকে জেলার চারটি উপজেলায় এই পেঁয়াজের উৎপাদন শুরু হয়েছে। এই জাতের বীজ যাঁরা আগে বপণ করেছিলেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা খেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে শুরু করেছেন। ভালো দাম পাওয়ায় তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পেঁয়াজ শীতকালীন ফসল। বছরে একবার আবাদ হওয়ায় প্রতিবছরই গ্রীষ্মকালে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়। সুযোগ বুঝে বিক্রেতারাও ইচ্ছেমতো দাম হাঁকান। এতে ভোক্তাদের হিমশিম অবস্থার সৃষ্টি হয়। সংকট মোকাবিলায় বিদেশ থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। ভোক্তা ও স্থানীয় চাষিদের স্বার্থ বিবেচনায় গত বছর সরকারি প্রণোদনার আওতায় প্রথমবারের মতো সীমিত পরিসরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ শুরু হয়, সফলতাও আসে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার দুই দফায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জেলায় খরিপ মৌসুমে ১ হাজার ২০০ বিঘা জমির মালিককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথমবার ১ হাজার ২০০ বিঘা জমিতে চাষ করা হয় এবং চলতি বছর অক্টোবরে আরও ১ হাজার ২০০ বিঘা জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, যথাযথ পরিচর্যা করলে প্রতি বিঘায় ৮০ থেকে ৯০ মণ হারে ফলন ফলতে পারে।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো ও আমদানি–নির্ভরতা কমানোর উদ্দেশ্যে নাসিক এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফল পাওয়া গেছে। স্থানীয় কৃষকেরা এই পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আগামী বছর বাণিজ্যিক ভিত্তিকে এই পেঁয়াজ চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে পেঁয়াজ বারোমাসি ফসলে পরিণত হবে এবং ভবিষ্যতে পেঁয়াজের আর কোনো সংকট থাকবে না।

সম্প্রতি সদর উপজেলার বোয়ালিয়া মাঠে কৃষক কবির হোসেনের পেঁয়াজখেতের পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিনতে আজিজের সঙ্গে। এ সময় সঙ্গে ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল হক ও মোস্তাফিজুর রহমান। আফরিন আজিজ জানান, সরেজমিন পেঁয়াজ আবাদের পরিস্থিতি দেখতে মাঠে এসেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ চাষে অনুপ্রাণিত করতে সদর উপজেলার ৩৫০ কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বিঘাপ্রতি ১ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ২০ কেজি এমওপি সার, পলিথিন, রশি এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় হিসেবে ২ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিত মাঠে এসে খোঁজখবর ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কৃষক কবির হোসেন জানান, তাঁর ২৮ কাঠা (৪৬ শতক) জমিতে আগে ধনেপাতার চাষ করলেও এ বছর প্রথম কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহে নাসিক এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ করেছেন। প্রতি কাঠায় তিন মণ হারে ফলনের আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘ধনেপাতায় ঝুঁকি থাকলেও পেঁয়াজে তেমন ঝুঁকি নেই। আগামী সময়ে আরও বড় পরিসরে পেঁয়াজ আবাদ করব।’ এই কৃষকের আশা, কৃষি বিভাগ সঠিক সময়ে মানসম্মত বীজ নিশ্চিত করতে পারলে আগামীতে এই চাষের আরও সম্প্রসারণ ঘটবে।

সদর উপজেলার বেগমপুরের তরুণমো. ফয়সাল ২৭ কাঠা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেই সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।