‘লিডারে’র নির্দেশে প্রার্থী

চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সাহাদাত হোসেন।

সাহাদাত হোসেন ও ফারুক হোসেন

ফরিদপুরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সাহাদাত হোসেন। গত বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের কাছে তিনি ওই মনোনয়নপত্র জমা দেন।

সাহাদাত হোসেন (৫৩) কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক। তিনি এর আগে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, সদরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান ও চরভদ্রাসনের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাউসার।

আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না। সাহাদাত যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করেন, তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিক্সন চৌধুরী, সংসদ সদস্য, ফরিদপুর-৪ আসন

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক ও সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আরিফ উপস্থিত ছিলেন। ফারুক হোসেন (৬১) ফরিদপুর শহরের হাবেলী গোপালপুর মহল্লার বাসিন্দা জাহিদ হোসেনের ছেলে। চেয়ারম্যান পদে আরও দুন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন, এম এ আজিজ ও নূর ইসলাম সিকদার।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর, আর ভোট গ্রহণ ১৭ অক্টোবর।

ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন। স্থানীয় রাজনীতিতে সংসদ সদস্যের প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ। সাহাদাত হোসেন আগে কাজী জাফরউল্যাহর পক্ষে ছিলেন। দুই মাস আগে তিনি নিক্সন চৌধুরীর পক্ষে যোগ দেন।

বুধবার কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি করে বলেন, ‘যুবলীগের যেকোনো স্তরের নেতা–কর্মী যদি বিদ্রোহী প্রার্থী বা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেন বা প্রচার–প্রচারণা চালান বা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন, তাঁর বা তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ সম্পর্কে সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিগত বছরগুলোতে ভোট হয় না। নির্বাচিত চেয়ারম্যান–মেম্বারদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং নিশ্চিত করতে প্রার্থী হয়েছি। আমি ওপর থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছি এবং লিডারের নির্দেশে প্রার্থী হয়েছি।’ সংগঠনের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগ যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সেটা একটা গতানুগতিক প্রক্রিয়া।

সম্প্রতি নিক্সন চৌধুরী একাধিক সভা ও অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁর প্রার্থী হিসেবে সাহাদাত হোসেনের নাম ঘোষণা করেন এবং তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন। ৭ সেপ্টেম্বর আলগি ইউনিয়নে জনসভায় নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা ভোট দিতে পারি না। আমরা প্রতিবাদও করতে পারি নাই। এবার আমরা আমাদের ভাগ বুঝে নিতে চাই। এবার খেলা হবে এ নির্বাচন নিয়ে। ভাঙ্গা থেকে এবার প্রার্থী দেওয়া হবে। জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন নিয়ে আমাদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে আসব।’

তবে গতকাল মুঠোফোনে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘সাহাদাত ভাঙ্গার ছেলে। আমি চেয়েছিলাম তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাক। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার আগ পর্যন্ত তাঁর পক্ষে কাজ করেছি। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না। সাহাদাত যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যুবলীগ নেতার ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ প্রার্থী, শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী। কেন্দ্রীয় এ সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ আওয়ামী লীগ কিংবা এর সহযোগী সংগঠনের নেতা বা কর্মীর নেই। কেন্দ্রীয় যুবলীগের পক্ষ থেকে এ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়া, সাহায্য–সহযোগিতা করা হলে ‘কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’ বলে জানিয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দেখবেন।’