পুকুর-জলাশয় রক্ষার দাবিতে রাজশাহীতে ‘জলাধার বন্ধন’

রাজশাহীর পুকুর জলাশয়, জলধারা সংরক্ষণের দাবিতে জলাধারবন্ধন। আজ মঙ্গলবার রাজশাহী নগরের সোনাদিঘী চত্বরেছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী নগরে সব পুকুর, জলাশয় ও জলাধার সংরক্ষণে ‘জলাধার বন্ধন’ নামে এক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার নগরের সোনাদিঘি পাড়ে সবুজ সংহতি, পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদ, ইয়্যাশ, ইয়ুথ ফোরাম ও বারসিক এ কর্মসূচি পালন করে। এতে জলাধার রক্ষায় ৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এটি সঞ্চালনা করেন ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জের (ইয়্যাশ) সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান।

এতে বক্তব্য দেন পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মাহবুব টুংকু, সবুজ সংহতির সদস্যসচিব মো. নাজমুল হোসেন, সেভ দ্য ন্যাচার অ্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ইয়্যাশের সভাপতি সামীউল আলীম, রাজশাহী মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা, আদিবাসী যুব পরিষদের রাজশাহী মহানগরের সভাপতি উপেন রবিদাস, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম প্রমুখ।

পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মাহবুব টুংকু বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের যাঁরা পুকুর খনন করেছিলেন, তাঁরা একটি সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকেই করেছিলেন। আজকের রাজশাহীর তাপমাত্রা, গরম অনুভূতি দেখে তা বোঝা যায়। পুকুরের পানি দিয়ে সব কাজ করা হতো। মানুষ তখন পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করত। আজকে সোনাদিঘির পাড়ে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, এটা পুকুর ছিল। এই দিঘির দক্ষিণ দিকে কলেজিয়েট স্কুল। সেখান থেকে উত্তর দিতে তাকালে এখানে সোনাদিঘি আছে নাকি সোনা চৌবাচ্চা আছে, কেউ বলতে পারবে না। পুরোটা ঢেকে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।’

মাহবুব টুংকু আরও বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই আমরা দাবি জানিয়ে আসছি, ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর অধিগ্রহণ করা হোক। পরে তা সংরক্ষণ করা হোক। কিন্তু কিছু পুকুর সংরক্ষণের নামে কী করা হচ্ছে, তা এই সোনাদিঘির সোনা চৌবাচ্চার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সংরক্ষণের নামে পুকুরের দৈর্ঘ্য কমিয়ে কংক্রিট দিয়ে বাঁধানো হচ্ছে। সুইমিংপুলের পানি কখনো ঠিক থাকে না। পানি পাল্টাতে হয়। কংক্রিটের পুকুরের পানি কী হবে? এই পানি পচে যাবে। এ রকম ফাঁপা উন্নয়ন রাজশাহীর মানুষ চায় না। রাজশাহীর পুকুরমালিকেরা তো পুকুর ভরাট করবেনই। তাঁদের প্রণোদনা দেওয়া হোক। সামনে সিটি করপোরেশনের বাজেট ঘোষণা হবে। বাজেটে পুকুরমালিকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হোক। কংক্রিট দিয়ে মুড়িয়ে যে পুকুরগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে, সেই ভ্রান্ত ধারণা থেকে আপনারা সরে আসুন।’

সেভ দ্য ন্যাচার অ্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, রাজশাহী শহরের উন্নয়ন বিউটি পারলার থেকে সেজে আসার মতো। রাজশাহীর বিভিন্ন পুকুরগুলোকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, সেগুলোকে নান্দনিক করার জন্য কংক্রিট, টাইলস দিয়ে সাঁতার কাটার সুইমিংপুল বানানো হচ্ছে। চারপাশে ঘাস দিয়ে, গাছ লাগিয়ে নান্দনিক করা যেত। অথচ শহরটাকে টাইলস দিয়ে মোড়ানো হচ্ছে। রাজশাহীতে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। নগরের জেলখানার প্রাচীরের পাশে থাকা গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। পানির অভাব দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। একসময় মানুষ পুকুরের পানিতে গোসল করত, গৃহস্থালির কাজ করত।’

সবুজ সংহতির সদস্যসচিব মো. নাজমুল হোসেন কর্মসূচিতে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য দাবিগুলো হচ্ছে রাজশাহীর সব পুকুর জলাশয় সংরক্ষণ করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা, ব্যক্তিমালিকানায় থাকায় পুকুর অধিগ্রহণ করা, প্রয়োজনে পুকুরমালিকদের প্রণোদনা দেওয়া, রাজশাহী নগরে ১০ থেকে ১২ শতাংশ এলাকা জলাধার ও ১৫ শতাংশ বনভূমি নিশ্চিত করা, ভরাট হয়ে যাওয়া পুকুর-জলাশয় উদ্ধার করে খনন করা, উচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ৯৫২টি পুকুর সংরক্ষণ করা।

কর্মসূচি শেষে ওই চার সংগঠনের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ওই স্মারকলিপি পাঠানো হয়।