যশোরে ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সহকারী পোস্টমাস্টারের নামে মামলা
১ কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ যশোর প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল (চলতি দায়িত্ব) আব্দুল বাকীর (৫৫) নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হয়েছে। আজ রোববার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে একই কার্যালয়ে মামলাটি করেন।
অভিযুক্ত আব্দুল বাকী বর্তমানে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন। তাঁর বাড়ি যশোর শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া এলাকায়।
দুদক যশোরের উপপরিচালক মো. আল আমিন বলেন, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের যশোর প্রধান ডাকঘরের ১৭ জন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের হিসাব ব্যবহার করে সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল (চলতি দায়িত্ব) আব্দুল বাকী ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে মামলায় তাঁকে (আব্দুল বাকী) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের জন্য মামলার বাদী মোশাররফ হোসেনকেই তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাঁদেরও আসামি করা হবে।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ ফেব্রুয়ারি খুলনার পোস্টমাস্টার জেনারেল শামসুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল যশোর প্রধান ডাকঘরে তদন্তে আসে।
তদন্তের পর সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল আব্দুল বাকীকে খুলনা বিভাগীয় অফিসে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়। সেখানে তাঁকে আটক করে খুলনার পুলিশ। ওই রাতেই খুলনা থেকে তাঁকে যশোর কোতোয়ালি থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাঁকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্তের জন্য ডাক বিভাগের খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল (তদন্ত) খন্দকার মাহাবুব হোসেনকে সভাপতি করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটি, ডাক বিভাগ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি আব্দুল বাকী সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল হিসেবে যশোরে যোগদান করেন। এরপর তিনি প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে লেজার খাতা (বই) নিজের কাছে নিয়ে তাতে ১৭ জন গ্রাহকের সঞ্চয় হিসাব থেকে পর্যায়ক্রমে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। একই বছরের ২৫ জানুয়ারি তিনি প্রথম একটি সঞ্চয় হিসাব থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। সর্বশেষ শহরের খড়কি এলাকার নাসরিন পারভীন নামের এক নারীর সঞ্চয় বই থেকে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ১৪ লাখ ৫০০ টাকা তুলে নেন। অথচ ওই হিসাবে নাসরিন পারভীনের মাত্র আড়াই হাজার টাকা জমা ছিল। লেজার খাতা ও সঞ্চয় বইয়ে আবদুল বাকী নিজেই টাকা জমা দেখিয়েছেন। ২ ফেব্রুয়ারি উপশহর ই-ব্লক এলাকার মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যক্তির সঞ্চয়ী হিসাব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৩ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেন আবদুল বাকী। বিষয়টি সন্দেহ হলে ডেপুটি পোস্টমাস্টার মেহেরুন্নেছা খাতাপত্র যাচাই করে ঘটনার সত্যতা পান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল (তদন্ত) খন্দকার মাহাবুব হোসেন বলেন, লেজার খাতায় আবদুল বাকীর কোনো স্বাক্ষর লাগে না। তিনি তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে লেজার খাতা নিজের কাছে নিয়ে রাখতেন এবং বিভিন্ন গ্রাহকের সঞ্চয় হিসাবে পেছনের তারিখ দেখিয়ে টাকা জমা দেখাতেন। পরে ওই গ্রাহকের লোক সাজিয়ে কাউকে দিয়ে টাকা উত্তোলন করে নিজেই টাকা আত্মসাৎ করতেন।
ডাক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, যেসব ব্যক্তির সঞ্চয় হিসাবে টাকা থাকে না বা আর লেনদেন করতে চান না, তাঁদের অনেকের সঞ্চয় বই কাউন্টারে পড়ে থাকে। আবদুল বাকী কাউন্টার থেকে সেসব ব্যক্তির সঞ্চয় বই নিজের কাছে নিয়ে রাখতেন।
এমন ১৭ জন গ্রাহকের সঞ্চয় বই ব্যবহার করে ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি আরও বলেন, কাউন্টারে যেদিন বেশি ভিড় থাকত, সেদিন তিনি এসব সঞ্চয় হিসাব থেকে টাকা তুলতেন। সরকারি কর্মকর্তাদের পরিচয় ব্যবহার করতেন। যে কারণে কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তারা বেশি যাচাই-বাছাই করতেন না বা সুযোগ পেতেন না।