জরিমানার পরও বন্ধ হয়নি অতিরিক্ত হাসিল আদায়

গরুপ্রতি ২৩০ টাকা হাসিল নেওয়ার নিয়ম। কিন্তু ২২০ টাকা বেশি আদায় করছেন ইজারাদার।

ফাইল ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে গবাদিপশুর হাটে ক্রেতাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত হাসিল (কর) আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাটে একের পর এক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পর জরিমানা করেও বন্ধ হচ্ছে না অতিরিক্ত হাসিল আদায়।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন অনুমোদিত হাটবাজারের হাসিল আদায়ের তালিকা অনুযায়ী, একটি গরুর জন্য ২৩০ এবং একটি ছাগলের জন্য ৯০ টাকা আদায় করা যাবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার হাট পশু কেনাবেচার জন্য প্রসিদ্ধ। সপ্তাহের প্রতি শনিবার এখানে হাট বসে। গত শনিবার দুপুরে কাতিহার হাটে অতিরিক্ত ও নিয়মের বাইরে হাসিল নিতে দেখা যায়।

১১ হাজার টাকা দিয়ে একটি খাসি কিনেছি। ছাগলপ্রতি ৯০ টাকা হাসিল নেওয়ার নিয়ম থাকলেও আমার কাছ থেকে ১৫০ টাকা নিয়েছে।
আমির  হোসেন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বাসিন্দা

হাটে একটি গরু কিনছিলেন হরিপুরের দামোল গ্রামের বাসিন্দা মো. সফিকুল। ইজারাদারের লোক তাঁকে ২৩০ টাকার একটি রসিদ ধরিয়ে দিয়ে ৪৫০ টাকা পরিশোধ করতে বলেন। এ নিয়ে অনেক বাগ্‌বিতণ্ডার পর তিনি অতিরিক্ত ২২০ টাকা ছুড়ে দেন ইজারাদারের লোকের দিকে। কিন্তু ইজারাদারের লোক সেই টাকার কোনো রসিদ তাঁকে দেননি। মো. সফিকুল বলেন, ‘হাটে গরুপ্রতি ২৩০ টাকা হাসিল নেওয়ার নিয়ম। কিন্তু ২২০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ করেই-বা লাভ কী?’

রসিদের বাইরে গরুপ্রতি অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসিল আদায়কারী এক ব্যক্তি জানান, ইজারাদার যেভাবে হাসিল আদায় করতে বলেছেন, তাঁরা সেভাবেই হাসিল আদায় করছেন। তিনি তাঁর নাম ও পরিচয় জানাতে রাজি হননি।

ছাগল কিনতে এসে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর গ্রামের আমির  হোসেন বলেন, ‘১১ হাজার টাকা দিয়ে একটি খাসি কিনেছি। ছাগলপ্রতি ৯০ টাকা হাসিল নেওয়ার নিয়ম থাকলেও আমার কাছ থেকে ১৫০ টাকা নিয়েছে।’ একই অভিযোগ করেন ভবানন্দপুর গ্রামের আবুল হোসেন, চন্দনচহট  গ্রামের চৈতু রাম ও মীরডাঙ্গী গ্রামের আব্বাস আলী।

ওই সময় হাটে গরু কিনতে আসা রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ এলাকার বাসিন্দা সত্যেন রায় অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার সব হাটেই অতিরিক্ত খাজনা আদায় চলছে। এর প্রতিবাদে দুবার মানববন্ধন করেন স্থানীয় লোকজন। বিষয়টি নজরে পড়লে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ১৩ মে রানীশংকৈলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইন্দ্রজিত সাহা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইজারাদারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এরপর তাঁকে আরেকবার জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু বারবার জরিমানা করা হলেও পশুরহাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় বন্ধ করেননি তিনি।

অভিযোগ পেয়ে গত শনিবার দুপুরে কাতিহার হাটে যান ইন্দ্রজিৎ সাহা। সেখানে গিয়ে তিনি অভিযোগের সত্যতা পান। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে হাট ইজারাদারকে ভোক্তা অধিকার আইনে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।

সদর উপজেলার কাচনা গ্রামের বাসিন্দা বলেন, এখানে প্রতি হাটে অন্তত ৫০০ গরু ও ২০০ ছাগল বেচাকেনা হয়। আর প্রতিটি গরুতে অতিরিক্ত ২২০ ও ছাগলে ৬০ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে। এ হিসাবে প্রতি হাটে ইজারাদার ক্রেতাদের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বেশি নিচ্ছেন। সেখানে মাত্র ৩০ হাজার টাকা জরিমানা খুবই সামান্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাতিহার হাটের ইজারাদার সানোয়ার হোসেন বলেন, জেলার অন্য সব হাটে যে হারে হাসিল আদায় করা হচ্ছে, এখানেও সেটাই নেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বারবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরও হাটে অতিরিক্ত হাসিল আদায় বন্ধ না হওয়ার বিষয়টি আপনার কাছে জানলাম।’ বারবার অভিযুক্ত হলে তাঁর ইজারা বাতিল করার সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইজারা নীতিমালায় সেটা নেই। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিধানে কোনো ব্যক্তি একই অপরাধে আবারও অভিযুক্ত হলে, শাস্তি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি বলা আছে।