আমরা কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না: যুবদল সভাপতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের মাঠে আগরতলা অভিমুখী লংমার্চে বক্তব্য দেন যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বুধবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত স্বাধীনচেতা জাতি। আমরা বাংলাদেশের যেকোনো ভূখণ্ড ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য জনগণ যেকোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়ে আমরা আপসহীন। আমরা কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না।’

ঢাকা থেকে ভারতের আগরতলা অভিমুখী লংমার্চ উপলক্ষে বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের মাঠে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবদল সভাপতি এ কথা বলেন। বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল এ লংমার্চ কর্মসূচির আয়োজন করে। বিকেল চারটার দিকে লংমার্চের বহর আখাউড়া বন্দরের মাঠে পৌঁছায়।

আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেন, একটি রাষ্ট্রে হাইকমিশনারের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ওই রাষ্ট্রের। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, রাষ্ট্র, সরকার সেখানে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি এ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে হবে। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের বাইরে আমাদের কোনো প্রভু নেই। আমরা বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিবেশীকে চিন্তা করি।’

যুবদলের সভাপতি বলেন, ‘আমরা ভারতকে একটি বার্তা দিতে চাই। আপনারা বিগত সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনার সরকারকে আশ্রয় দিয়েছেন, প্রশ্রয় দিয়েছেন। এই ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা আপনাদের দেশে অবস্থান করছেন। আমরা অবিলম্বে তাঁকে বিচারের আওতায় আনার জন্য পরবর্তী সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমরা অনুরোধ জানাই, আপনারা ভারত সরকারকে শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসরদের ফিরিয়ে দিতে বলেন। এ দেশের প্রচলিত আইনে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টে আমাদের ২০০ নেতা-কর্মীসহ যে ২ হাজার শহীদ হয়েছে, আমরা প্রতিটি হত্যার বিচার চাই। এখনো ভারতে অবস্থানকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যারা যারা অবস্থান করছে, তাদের প্রত্যেককে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে লংমার্চের সমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম, সদস্য কবির আহমেদ ভূঁইয়াসহ কেন্দ্রীয় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। লংমার্চে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

এস এম জিলানী বলেন, ‘ভারত নিজেকে সব সময় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য বারবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নিয়েছে। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারবার ভারত নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি বলেন, ‘ভারত সীমান্তে একাধিকবার হাজার হাজার নিরীহ জনগণকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা ভারতের কাছে এই সীমান্ত হত্যা বন্ধ চাই। আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ সব সময় বন্ধুসুলভ আচরণ করি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পিন্ডির জিঞ্জির ভেঙেছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়। এই লংমার্চ থেকে আপনাদের যদি শুভবুদ্ধির উদয় না হয়, তাহলে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটির জন্য পাহারায় থাকব।’

আখাউড়ার স্থলবন্দরের মাঠে বিএনপির তিন সংগঠনের লংমার্চের সভায় চার-পাঁচ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে। এদিকে লংমার্চ উপলক্ষে স্থলবন্দর এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। দুই দেশের যাত্রীদের হেঁটে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টে যেতে হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।