কুয়াকাটায় লাখো পর্যটকের আগমনের আশায় প্রস্তুত ব্যবসায়ীরা
রমজান মাসে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় সেভাবে পর্যটক ছিলেন না। এ কারণে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা কিছুটা অলস সময় পার করেছেন। ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের ছুটি সামনে রেখে হোটেল-মোটেল বুকিং শুরু হওয়ায় আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাঁরা। পর্যটকদের জন্য আবাসিক হোটেল-রেস্তোরাঁ ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। পর্যটকদের বরণ করে নিতে অন্য ব্যবসায়ীরাও নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঈদ ও নববর্ষের ছুটিকে কেন্দ্র করে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপরূপ বেলাভূমি কুয়াকাটা আবার পর্যটকদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানিয়েছেন, কুয়াকাটায় ১৭০টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। এসব হোটেল-মোটেলের ৬০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। তবে প্রথম শ্রেণির ১৫-২০টি হোটেলের অন্তত ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশাবাদী পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের ছুটি কেন্দ্র করে কুয়াকাটায় লাখো পর্যটকের সমাগম হবে। এতে প্রাণ ফিরে পাবে কুয়াকাটা।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। এর কারণ হলো, এখন যে কেউ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুব সহজে কুয়াকাটায় চলে আসতে পারেন। এতে কুয়াকাটায় সারা বছরই কমবেশি পর্যটকের আনাগোনা থাকে। তবে বছরের বিশেষ দিনগুলোতে কুয়াকাটায় লোকজন বেশি আসেন।
কুয়াকাটার অভিজাত আবাসিক হোটেলের একটি সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাস। রিসোর্টটির সহকারী ব্যবস্থাপক শাহীন আলম বলেন, ‘আমাদের এখানের ৮০ শতাংশ কক্ষের অগ্রিম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে বাকি কক্ষগুলোরও বুকিং হয়ে যাবে। আমরা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় সুবিধা দিয়েছি।’
এবার ছুটিতে লাখো পর্যটকের আগমনের আশায় সৈকত এলাকার রাখাইন মহিলা মার্কেট, ঝিনুক মার্কেটের দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সৈকতের মাছভাজার দোকানগুলোতে ব্যবসায়ীরা ইলিশ, কোরাল, লবস্টার, রুপচাঁদা, টুনা, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ জেলেদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন। মাছ ব্যবসায়ীদের একজন মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মাছ ফ্রাইয়ের শতাধিক দোকান রয়েছে। আমরা মাছ ব্যবসায়ীরা এবারের ছুটিতে এসব দোকানে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার মাছ বিক্রির আশা করছি।’
কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের আচার বিক্রেতা মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘নানা ধরনের দেশি-বিদেশি আচার ও চকলেটের সমাহার নিয়ে আমার দোকান সাজানো হয়েছে। কুয়াকাটায় হাজারো পর্যটকের আনাগোনা থাকবে। তাঁদের কাছে আমরা বাহারি স্বাদের আচার ও চকলেট বিক্রি করব।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যটকদের ছবি তোলার জন্য বাণিজ্যিক ক্যামেরাম্যান, চটপটি-ফুচকার দোকানি, ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা-ভ্যানচালকেরা নিজেদের মতো প্রস্তুতি নিয়েছেন। ট্যুরিস্ট বোট, স্পিডবোট এবং ওয়াটার বাইকের মালিক-চালকেরা বিভিন্ন প্যাকেজের অফার নিয়ে পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করছেন। এককথায়, কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে মনোমুগ্ধকর ১৮ কিলোমিটার বেলাভূমি পর্যটকদের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। সাদাপোশাকে আমাদের সদস্যরা টহলে থাকবেন। আশা করছি আমরা পর্যটকদের শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারব।’
কুয়াকাটা সৈকতে বেড়াতে এসে পর্যটকেরা ট্যুরিজম পার্ক, জাতীয় উদ্যান (ইকোপার্ক), শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, সীমা বৌদ্ধবিহার ঘুরে দেখতে পারবেন। এ ছাড়া কুয়াকাটার পশ্চিমে সমুদ্রপথে ফাতরার বন (টেংরাগিরি), সোনাকাটা-ফকিরহাট (ইকোপার্ক), লাল কাঁকড়ার চর, লেম্বুর বন, শুঁটকিপল্লি ঘুরে দেখে আনন্দ পাবেন ভ্রমণপিপাসুরা।
কুয়াকাটা সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদ-পরবর্তী সময়ে কুয়াকাটায় পর্যটকদের ভিড় বাড়বে, এমন ধারণা মাথায় রেখেই সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি দল সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে। এর বাইরে চিকিৎসক দল, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের একটি দলও তৈরি রয়েছে।