ফেরিতে ওঠার সড়কটিই টানছে পর্যটক

বাঁশবাড়িয়া ঘাটে ফেরিতে ওঠার সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয়েছে সড়কটি। তবে স্থানীয় মানুষের কাছে এই সড়কটিই হয়ে গেছে ঘুরে বেড়ানোর অন্যতম স্থান। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকেও পর্যটকেরা সড়কটি দেখতে আসছেন।

সড়ক বসে দেখা যায় সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। তাই বিকেলে বাড়ে দর্শনার্থীদের ভিড়। গত শুক্রবার বিকেলে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট অ্যাপ্রোচ সড়কেছবি: প্রথম আলো

বেড়িবাঁধ থেকে সাগরের দিকে চলে গেছে ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সড়ক। বিকেল হলেই সেই সড়কে ভিড় করেন হাজারো দর্শনার্থী। কেউ সড়কের এক পাশে বসে উপভোগ করেন সাগরের রূপ। কেউ আবার সাগরের পানিতে মেতে ওঠেন দাপাদাপিতে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট অ্যাপ্রোচ সড়ক ঘিরে এই চিত্র এখন নিত্যদিনের। পাহাড়-সাগর পরিবেষ্টিত সীতাকুণ্ড উপজেলার নতুন পর্যটন স্পট হয়ে উঠেছে এই ফেরিঘাট অ্যাপ্রোচ সড়কটি।

গত ২৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ঘাট থেকে সন্দ্বীপ উপজেলায় ফেরি সার্ভিস চালু হয়। বাঁশবাড়িয়া ঘাটে ফেরিতে ওঠার সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয়েছে সড়কটি। তবে স্থানীয় মানুষের কাছে এ সড়কটিই হয়ে গেছে ঘুরে বেড়ানোর অন্যতম স্থান। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকেও পর্যটকেরা সড়কটি দেখতে আসছেন।

ফেরিঘাটের পরিচালনা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটি জানায়, অ্যাপ্রোচ সড়কটি ঘিরে প্রতিদিন অন্তত ২-৩ হাজার লোকের সমাগম হচ্ছে। ঘাটের পাশেই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত। সেখানেও আগে থেকেই দর্শনার্থীরা বেড়াতে আসেন।

সাগরের পাশে দৃষ্টিনন্দন সড়কটি দেখতে মানুষের ভিড়। গত শুক্রবার বিকেলে
ছবি; প্রথম আলো

বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিতি পায় ২০১৭ সালে। সে সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র সমুদ্রসৈকতটির ভিডিও-ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। পরে তা ছড়িয়ে পড়লে পর্যটক বাড়তে থাকে।

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিএর শুল্কঘর থেকে ফেরি ভেড়ানোর পন্টুন পর্যন্ত সড়কে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ঘাটে কে সন্দ্বীপের যাত্রী, আর কে দর্শনার্থী, তা বোঝার উপায় নেই। সড়কে কেউ ছবি তুলছেন, কেউ বসে আছেন। সাগরের পানিতে সাঁতার কাটছেন কিছু দর্শনার্থী। সাগরে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতেও দেখা যায় অনেককে।

সড়কটিতে কথা হয় ফেনীর দাগনভূঞা থেকে আসা কানাই চন্দ্র ধরের সঙ্গে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। চার সহকর্মীকে নিয়ে ছুটির দিনে বাঁশবাড়িয়া সৈকতে বেড়াতে এসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেরিঘাট উদ্বোধনের পর থেকে বাঁশবাড়িয়া সৈকতে আসার চেষ্টা করছি। কোনোভাবে সুযোগ হয়ে উঠছিল না। অবশেষে আসতে পারলাম। সীতাকুণ্ডের সৌন্দর্যে আমরা অভিভূত। এই উপজেলার সঙ্গে পাশের মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনাসহ একাধিক স্পটও ঘুরে দেখেছি।’

চট্টগ্রাম নগরের বার কোয়ার্টার এলাকা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে আসেন ব্যবসায়ী আল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাঁশবাড়িয়ায় তাঁর নানার বাড়ি। আগেও তিনি নানার বাড়ি বেড়াতে এসে বাঁশবাড়িয়া সৈকতে এসেছিলেন। অ্যাপ্রোচ সড়কটি হওয়ার পর এখন নতুন করে দেখতে এসেছেন। সড়কটি খুবই দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। ঝুমুর সেন নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, শৌচাগার না থাকায় বেড়াতে আসা মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানান, অ্যাপ্রোচ সড়কের শুল্কঘরে সন্দ্বীপগামী যাত্রীদের থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা এবং গাড়িভেদে বিভিন্ন হারে শুল্ক আদায় করা হয়। তবে যেসব পর্যটক সড়ক দেখতে আসেন তাঁদের শুল্ক দিতে হয় না। ফেরি ছাড়ার সময় দর্শনার্থীদের চাপে শুল্ক আদায় ব্যাহত হচ্ছে। অনেক যাত্রীও পর্যটক পরিচয় দিয়ে শুল্ক আদায় না করে ফেরিতে উঠে যান।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, দর্শনার্থীদের চাপে বিকেলে যাত্রীদের কাছ থেকে শুল্ক আদায়ে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তবে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে শুল্ক নেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। শুল্ক আদায় করতে হলে ন্যূনতম সুবিধা, বিশেষ করে শৌচাগার ও ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। ফেরিঘাটের পাশাপাশি পর্যটনকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।