খুলনায় ফার্মেসি থেকে স্বাস্থ্যসেবা নেন ২ ওয়ার্ডের বেশির ভাগ মানুষ

খুলনার অধিকাংশ জলবায়ু উদ্বাস্তুদের বসবাস নগরের ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাসও ওয়ার্ড দুটিতে। বেশির ভাগই ভাসমান ও নিম্ন আয়ের। সম্প্রতি ওয়ার্ড দুটির মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গবেষণা করেছে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)।

আজ বৃহস্পতিবার নগরের সিএসএস আভা সেন্টারে গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়। ‘লোকালাইজেশন অন স্ট্রেনদেনিং আরবান হেলথ সিস্টেম’ শীর্ষক গবেষণায় সার্বিক সহযোগিতা করেছে বেসরকারি সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড, জাগ্রত যুব সংঘ (জেজেএস)।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ওয়ার্ড দুটির ৯২ ভাগ মানুষ স্থানীয় ফার্মেসি থেকে স্বাস্থ্যসেবা নেন। তাঁরা ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধের নাম বলে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ নিয়ে আসেন। অনেক সময় শুধু রোগের লক্ষণের কথা বলেও ওষুধ নেন। অ্যান্টিবায়োটিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ওষুধও প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ফার্মেসি থেকে পান। জটিল সমস্যায় পড়লে ৮ কিলোমিটার দূরের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। ২৫ ভাগ মানুষ খরচের ভয়ে কোনো চিকিৎসাই নেন না।

দুটি ওয়ার্ডের ৬০ শতাংশ পরিবারের বর্জ্য ফেলার কোনো জায়গা নেই, তারা পাশের নালায় বর্জ্য ফেলে। এলাকার অধিকাংশ মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। একটু জটিল রোগের ক্ষেত্রে সঞ্চয় ভেঙে, ধারদেনা করে ও অনেক সময় মূল্যবান জিনিস বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ মেটান তাঁরা। শতভাগ প্রতিবন্ধী কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা পান না।

গবেষণায় বলা হয়েছে, দুটি ওয়ার্ডের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে এসেছেন। যাঁরা সামান্য আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাঁদের সর্বোচ্চ আয় ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১৭ হাজার টাকা তাঁরা পরিবারের পেছনেই খরচ করেন। চিকিৎসকের পেছনে গড়ে খরচ করেন ৩৫০ টাকা আর ওষুধের পেছনে খরচ করেন ২ হাজার টাকা।

গবেষণায় দুটি ওয়ার্ডের ২০৫টি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরিবারগুলোর মোট সদস্য ৮০০ জনের বেশি। পাঁচজন মাকে নিয়ে একটি এফজিডি (ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন) করা হয়েছে। ১৩ জন নগর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই দুই ওয়ার্ডের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সরেজমিন পরিদর্শন করে গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রেড কার্ডের আওতায় নেওয়ার সুপারিশ করা হয় গবেষণায়। সেই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালগুলোকে আরও কার্যকরী করা ও সেবার মান বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।

নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ক এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন অধ্যাপক হাসনাত এম আলমগীর। কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের কনসোর্টিয়াম প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ইমরানুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক ও পিপিআরসির কনসালট্যান্ট মো. আবদুল ওয়াজেদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পিপিআরসির চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। অন্যদের মধ্যে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আরিফ হোসেন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেসমিন আক্তার, ডেপুটি সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্বপন কুমার হালদার ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন জেজেএসের প্রকল্প সমন্বয়কারী মামুনুর রশীদ।

কাউন্সিলর জেসমিন আক্তার বলেন, খুলনায় সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতালে সেবার মান নাজুক। সরকারি হাসপাতালে ভালো সেবা না পেয়ে বাসিন্দারা বেসরকারি হাসপাতালে যান। কিন্তু সেখানেও ভালো সেবা পান না। অন্যদিকে ব্যাঙের ছাতার মতো মানহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার তো আছেই। তিনি এ ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তন করার আহ্বান জানান এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সপ্তাহে এক দিন বিনা মূল্যে সেবা দেওয়ার রীতি চালুর পক্ষে মত দেন।