পদ্মার ভাঙনে তিন দিনে বিলীন ৯টি বসতভিটা

ভাঙন–আতঙ্কের ছাপ পড়েছে স্থানীয় ব্যক্তিদের চোখেমুখে। অনেকে অন্যত্র ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন।

  • শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

  • নওপাড়া গ্রামের ভাঙন আটকাতে ৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

  • আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামটির বাসিন্দাদের।

ভাঙছে পদ্মার তীরের অনেকের ভিটেবাড়ি। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার লৌহজং–তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বর্ষা শেষে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামে পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ৩ দিনে গ্রামটির ১৫০ মিটার এলাকার ৯টি বাড়ির বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন–আতঙ্কে কয়েক শ পরিবার ভিটেমাটি নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাঁদের ঘরবাড়ি।

বড় নওপাড়া এলাকায় দেখা যায়, পদ্মার স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে নদীর পাড় ভাঙছে। ভাঙন–আতঙ্কের ছাপ পড়েছে স্থানীয় ব্যক্তিদের চোখেমুখে। অনেকে ঘর সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছেন।

বৃষ্টির কারণে সেটাও পারছেন না অনেকে। আসবাব গুছিয়ে রেখেছে কয়েকটি পরিবার। ভাঙনের মাত্রা বেড়ে গেলে ঘর ভেঙে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত তাঁরা। আবার কেউ কেউ তাঁদের আসবাব কাছের আত্মীয়ের বাসায় রেখে এসেছেন।

বড় নওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মামুন মোল্লা বলেন, ‘একসময় নদী বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির পাশে এসে আটকে ছিল। গত শনিবার হঠাৎ ভাঙনে ভিটেমাটিহারা হলাম। ঘর ভেঙে অন্যের বাড়িতে সরিয়ে রেখেছি। মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, শনিবার সকালে কুতুব মোল্লা, মামুন মোল্লা ও মিঠু মোল্লার কয়েক শ বছরের পুরোনো ভিটেবাড়ি পদ্মার গর্ভে চলে গেছে। তড়িঘড়ি করে তাঁদের ঘর ভেঙে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। কখন পদ্মায় গিলে খাবে, সে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তাঁদের। তাঁরা জানান, দিনে–রাতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। শত শত বালু বহনকারী বাল্কহেড চলাচল এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে পদ্মা নদীতে প্রচণ্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। পদ্মায় প্রচণ্ড ঘূর্ণি স্রোত। এসব কারণে বর্ষার শেষ সময়েও পদ্মা নদীর বড় নওপাড়া গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে।

ভাঙনের খবর পেয়ে এরই মধ্যে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল আউয়াল। তিনি জানান, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলা হবে। আর পদ্মায় বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ঘন ঘন অভিযান চলছে।

গতকাল সোমবার সকালে বেজগাঁও ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুন্দিসার এলাকার প্রায় ৩০ মিটার জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ওই ভাঙনের ৭০–৮০ মিটার দূরেই রয়েছে সুন্দিসার মাদ্রাসা ও মসজিদ। ভাঙনের শিকার কুতুব মোল্লা বলেন, ‘চোখের সামনে বাপ–দাদার বসতভিটা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল। আটকাতে পারলাম না। আরও বহু মানুষের ঘর ভাঙনের মুখে। প্রশাসনের লোকজন এসে দেখে যাচ্ছে। কেন ভাঙন হচ্ছে, কীভাবে ভাঙন আটকানো যাবে, এ ব্যাপারে কারও কোনো পদক্ষেপ নেই।’

২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় জরিপ চালায়। তখন লৌহজং উপজেলার খড়িয়া থেকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পাউবো ১৩ কিলোমিটার এলাকা থেকে ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলাকাকে অতি মাত্রায় ভাঙনপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে বড় নওপাড়া গ্রামটি ছিল না।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্ত্তী জানান, নওপাড় গ্রামের ভাঙন আটকাতে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭০০ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এ কর্মকর্তা বলেন, বালু উত্তোলন, তীর ঘেঁষে বাল্কহেড চলাচল ও তীব্র স্রোতের কারণে পদ্মার ভাঙন বেড়েছে। এ তিনটি সমস্যার সমাধান না হলে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও ভাঙন ঠেকানো যাবে না।