বগুড়ায় নাহিদ হত্যাকাণ্ডে বিএনপি-জামায়াত জড়িত

বগুড়া শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা নাহিদ আহমেদ হত্যায় দলীয় কেউ জড়িত নন দাবি করে আজ বৃহস্পতিবার বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এই সময় নাহিদ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আহমেদকে (৩০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দলীয় কেউ নয়, বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা জড়িত। আজ  বৃহস্পতিবার বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা এই দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বলেন, বগুড়া শহরের যে এলাকায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে পৌরসভার সেই ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ। বিএনপি-জামায়াত শিবিরের এই চক্রটি সব সময় এলাকায় ভূমি দস্যুতা, ইট-বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখতে চায়। এরই অংশ হিসেবে ২০১২ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আশীষ কুমার, ২০২০ সালে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক রোকনুজ্জামান রনি, ২০২২ সালে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক নাজমুল হাসানকে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আহমেদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, নাহিদ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং তাদের গডফাদাররা। নাহিদ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমানও বক্তব্য দেন।

নাহিদ হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের পদধারী কারা রয়েছেন, জানতে চাইলে সাজেদুর রহমান বলেন, হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. রতন ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের শীর্ষ পদে আছেন। অন্যরাও বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক।

তবে মালগ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হত্যা মামলার আসামিদের ওঠাবসা ছিল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের সঙ্গে। নাহিদ একসময় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হয়ে ওঠেন। আর হত্যা মামলার আসামিদের আরেকজন শীর্ষ নেতার  সঙ্গে চলাফেরা ছিল ।

নাহিদ হত্যা মামলার আসামি কারা

গত মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে বগুড়া শহরের মালগ্রাম ডাবতলা মোড় এলাকায় নাহিদ আহমেদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রাত দুইটার পর তাঁর বাবা ঝন্টু শেখ বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। তবে মামলার আসামি কারা,  পুলিশ গণমাধ্যমকে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থেকে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে মামলার এজাহারের অনুলিপি পাওয়া যায়নি। বুধবার প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বগুড়া আদালত থেকে মামলার এজাহারের একটি অনুলিপি সংগ্রহ করা হয়।

নাহিদ হত্যা মামলায় ১৩ জন আসামি হলেন মালগ্রাম কলেজপাড়ার মো. রতন (৪৫), কসাইপাড়ার দুই ভাই রনি (৩০) ও রবিন (২৪), মালগ্রাম ডাবতলা মোড়ের কাঞ্চা মনির (২৮), মালগ্রাম শান্তিনগরের জুম্মন (২২), সেউজগাড়ি আমতলা  মোড়ের ছাব্বির (২৩), মালগ্রাম কসাইপাড়ার টিপু (২৩), ফারুক (৩০), ইমন (২৮), সিয়াম (২০), জাহিদ (১৯), রমেদ (২৬) ও দিপু (৩৫)।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কিছুদিন আগে মালগ্রাম শান্তিনগর এলাকার আদর্শ কলেজের পাশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমানের ভাটা থেকে আনা ইট ফেলতে গেলে আসামি রতন বাধা দেন। নাহিদ ইটবাহী ট্রাক ছাড়াতে গেলে আসামিদের সঙ্গে বিরোধ বাধে। এ ছাড়া রেলওয়ে হকার্স মার্কেট নিয়ে রবিনের সঙ্গেও বিরোধ ছিল। বিরোধের জেরে কয়েক মাস আগে রতন মুঠোফোনে নাহিদকে হুমকি দেন। এর জেরে গত মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে আসামিরা মালগ্রাম বেলতলা মসজিদসংলগ্ন এলাকায় নাহিদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান।

জানতে চাইলে মামলার বাদী ঝন্টু ব্যাপারী বৃহষ্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামিরা একসময় বিএনপি করলেও এখন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ছত্রচ্ছায়ায় থাকেন। একসময় নাহিদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল তাঁদের। নাহিদ শহর  স্বেচ্ছাসেবক লীগে পদ পাওয়ার পর রতন এবং রবিন তাঁকে সরিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে পূর্বপরিককল্পনা করেই নাহিদকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তাঁরা।’

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরে আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, হত্যা মামলার এজাহারের কপি গণমাধ্যমকে তাৎক্ষণিক দেওয়ার আইনগত বিধি নেই। আসামির নাম ফাঁস হয়ে গেলে গা ঢাকা দেওয়ার সুযোগ পায়।

ওসি আরও বলেন, নাহিদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বুধবার রাত আটটার দিকে বগুড়া শহর থেকে র‍্যাব সদর দপ্তরের (ইন্টেলিজেন্স উইং) সহযোগিতায় র‍্যাব-১২-এর একটি দল মো. ইমন (২৮) নামের  ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। ইমন বগুড়া শহরের মালগ্রাম কসাইপাড়া এলাকার মো. হেলালের ছেলে এবং নাহিদ হত্যা মামলার ৯ নম্বর আসামি। বৃহস্পতিবার ইমনকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে বগুড়ার আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।