ভোটটা দিতে পারলেন না অশীতিপর ফাতেমা বিবি

ভোট দিতে না পেরে শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন ফাতেমা বিবি। আজ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

৮০ বছর বয়সী ফাতেমা বিবি অনেক আগ্রহ নিয়ে সকাল নয়টায় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। দুই ঘণ্টা ধরে অনেক খোঁজখুঁজির পরও তাঁর ভোটার নম্বর পাওয়া গেল না। শেষে হতাশ হয়ে বেলা ১১টার দিকে বাড়ি ফিরে যান বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি।
আজ মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে। ভোটার ফাতেমা বিবি পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার মৃত আহাদ আলীর স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘৬০ বচর ধইরে ভোট দি আইসচি। এমপি ভোটে সমস্যা হইল না, এই ভোটে নম্বরই খুঁইজেই পালাম না।’

কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল এই নারীর ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে বেলা সাড়ে ১০টায় আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মী ও পোলিং এজেন্ট ছাড়া হাতে গোনা অল্প কিছু ভোটারের উপস্থিতি চোখে পড়ে। এ সময় ভোটকেন্দ্রের একটি কক্ষের সামনে বেঞ্চে ফাতেমা বিবিকে উদ্বিগ্ন চোখে বসে থাকতে দেখা যায়।

ফাতেমা জানান, সকাল নয়টার সময় তিনি ভোটকেন্দ্রে আসেন। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোটার নম্বর সংগ্রহ করতে না পারায় দেড় ঘণ্টা ধরে সেখানে বসে আছেন। সর্বশেষ ওই নারীর পূর্বপরিচিত সাগর আলী নামের একটি ছেলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গেছে ভোটার নম্বর খুঁজে বের করতে, তারও খোঁজ নেই।
পোলিং কর্মকর্তা বায়েজিদ হোসেন ফাতিমা বিবির মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনে সাগর আলীর খোঁজে বের হন। বায়েজিদ হোসেন বেলা ১০টা ৫৭ মিনিটে সাগর আলীকে খুঁজে নিয়ে আসেন। সাগর আলী অনলাইনে ফাতিমা বিবির নামের বিপরীতে একটি ভোটার নম্বর খুঁজে পান। কিন্তু ভোট দিতে গিয়ে দেখতে পান নম্বরটি মাহমুদা আহমেদ নামের এক নারীর। ওই নারী বিষয়টি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে জানালেও তিনি কোনো সমাধান দিতে না পারায় হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান।

ফাতেমা বিবি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেই নডা বাইজে গেলি এইচি। ওইকেন বোলচে নম্বর পাওয়া যাইচচে না। এইকেনে আইডি কাডের নম্বর মিলচে না। ইর আগে এমপিদের ভোট দিইচি। এবেড্ডা ভোট না দিইয়েই ফিরে যাচ্চি।’
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল দাবি করেন, ‘ওই বৃদ্ধার কাছে কোনো ডকুমেন্ট ছিল না। তাই ভোট দিতে পারেননি।’ জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র এনেছিলেন কি না, সেটা আমার জানা নেই। যেভাবে সবাই আসতেছে, সেভাবে তিনি আসেন নাই। ডকুমেন্ট (ভোটার নম্বর সংবলিত স্লিপ) ছাড়া তো ভোট নিতে পারি না।’