বাকিতে ইয়াবা বিক্রি না করায় ফরিদকে খুন করা হয়

নাগরপুরে ফরিদ উদ্দিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। টাঙ্গাইল পিবিআই কার্যালয়ের সামনে থেকে বুধবার দুপুরে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

বাকিতে ইয়াবা বড়ি বিক্রি না করায় টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় ফরিদ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে তিনজন মিলে হাত-পা বেঁধে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। পরে ফরিদের মৃত্যু নিশ্চিত করে তাঁর কাছে থাকা ইয়াবা বড়ি নিয়ে পালিয়ে যান ওই তিন ব্যক্তি।

ফরিদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিনজন আজ বুধবার টাঙ্গাইল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা জানিয়েছেন।

জবানবন্দি দেওয়া তিনজন হলেন নাগরপুরের ভাড়রা গ্রামের আনোয়ার তালুকদারের ছেলে অলি তালুকদার (১৯) ও সিরাজ মণ্ডলের ছেলে কামাল হোসেন (২৯) এবং শালিয়ারা গ্রামের শফিকুল আলমের ছেলে সোহানুর ইসলাম ওরফে ফারদিন (২০)। জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁদের গ্রেপ্তার করেন।

টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানবীর আহমেদ জানান, অলি তালুকদারের জবানবন্দি নেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান। এ ছাড়া কামাল হোসেনের জবানবন্দি নেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সজিব চৌধুরী এবং সোহানুরের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেস্কে জান্নাত রিপা। পরে বিকেলে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, নাগরপুরের বীরসলিল গ্রামের মৃত তোরাব আলী মিয়ার ছেলে ফরিদ গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর জমিতে পানি দেওয়ার জন্য তাঁদের নিজস্ব সেচ যন্ত্রের (শ্যালো মেশিন) ঘরে যান। তিনি ওই রাতে আর বাড়ি ফিরে আসেননি। পরদিন শনিবার দুপুরে সেচযন্ত্রের তালাবদ্ধ ঘরের ভেতর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর হাত, পা, মুখ বাঁধা ছিল এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।

গত শনিবার ফরিদের স্ত্রী শারমিন সুলতানা বাদী হয়ে নাগরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

পিবিআই টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন জানান, ঘটনার পর থেকেই পিবিআইয়ের একটি দল হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য তদন্ত শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়। মঙ্গলবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাঁরা জনান, নিহত ফরিদ উদ্দিন নিজে ইয়াবা সেবন করতেন এবং আশপাশের এলাকার অন্যান্য ইয়াবা–আসক্ত ব্যক্তিদের কাছে ইয়াবা বিক্রি করতেন। ঘটনার দিন গ্রেপ্তার অলি, কামাল ও সোহানুর রাত ১০টার দিকে ফরিদ উদ্দিনের সেচযন্ত্রের ঘরে যান। তাঁরা ফরিদের কাছে বাকিতে ইয়াবা চান। কিন্তু ফরিদ তাঁদের বাকিতে ইয়াবা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন ক্ষিপ্ত হয়ে ফরিদের সঙ্গে তাঁরা তর্ক–বিতর্ক ও মারামারিতে জড়িত হন। পরে ফরিদের হাত, পা, মুখ বেঁধে ফেলেন। ওই ঘরে থাকা একটি স্লাই রেঞ্জ (নাটবল্টু খোলার যন্ত্র) দিয়ে ফরিদের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে ফরিদ মারা যান। পরে ফরিদের কাছে থাকা ইয়াবা বড়ি নিয়ে তাঁরা পালিয়ে যান।