সিটি গেট থেকে চাড়ালকান্দি পর্যন্ত এলাকাটি ফায়ার সার্ভিসের কুমিরা স্টেশনের অধীন। সম্প্রতি সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ ক্ষতিগ্রস্ত সীমা অক্সিজেন কারখানা এলাকাটিতেই অবস্থিত। বিস্ফোরণে কারখানাটির ৭ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এর আগে গত বছরের ৪ জুন একই এলাকায় বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণে মারা যান ৫০ জন। আহত হন দুই শতাধিক মানুষ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সিটি গেট থেকে চাড়ালকান্দি পর্যন্ত এলাকায় ১৭৯টি জাহাজভাঙার কারখানাসহ ৪৫০টি কারখানা আছে। এলাকাটিতে পাঁচটি ইউনিয়ন অবস্থিত। ইউনিয়নগুলো হলো বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারী ও সলিমপুর। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তথ্য অনুযায়ী, পাঁচটি ইউনিয়নে বসতঘর ও দোকানঘরের হোল্ডিং নম্বর আছে প্রায় ৩০ হাজার।

জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআর) সহসভাপতি ও সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭৬ সালে কুমিরা ফায়ার স্টেশন করার সময় এলাকায় শিল্পকারখানা ও বসতি ছিল হাতে গোনা। কিন্তু এখন কারখানার পাশাপাশি জনবসতিও বেড়েছে। সীতাকুণ্ডে বড় বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। এ অবস্থায় উপজেলায় আরও দুটি ফায়ার স্টেশন প্রয়োজন।

সলিমপুর ইউপির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ বলেন, তাঁর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডসহ কোনো দুর্ঘটনা হলে কুমিরা স্টেশন থেকে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আসেন। এতে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।

ভাটিয়ারী ইউপির চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়ন খুবই ঘনবসতিপূর্ণ। ইউনিয়নটিতে অনেক কারখানা অবস্থিত। এ ছাড়া ভাটিয়ারী এলাকায় মহাসড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কুমিরা স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিস এসে উদ্ধার অভিযান চালাতে অনেক দেরি হয়ে যায়। তিনি বলেন, নতুন একটি ফায়ার স্টেশন করার কথা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। ২০১৮ সালে তাঁর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ফায়ার স্টেশনের জন্য খাসজমিও দেখানো হয়। এরপর ফায়ার স্টেশন করার প্রক্রিয়া থেমে গেছে।

কুমিরা ফায়ার স্টেশন সূত্র জানায়, জনবলকাঠামো অনুযায়ী স্টেশনটিতে ৩৫ জন থাকার কথা থাকলেও ১১ জনের সংকট রয়েছে। চারজন লিডার থাকার কথা থাকলেও আছেন দুজন। ফায়ারম্যান কম আছেন অন্তত নয়জন। স্টেশনটিতে পর্যাপ্ত যানবাহন আছে। তবে বিদ্যুৎ লাইন সংযুক্ত আছে—এমন কোনো স্থানে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্বন ডাই–অক্সাইড ব্যবহার করতে হয়। কার্বন ডাই–অক্সাইড ব্যবহারের ব্যবস্থা স্টেশনটিতে নেই।

কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বিএম কন্টেইনার ডিপোর বিস্ফোরণে স্টেশনের আটজন কর্মী নিহত হন। এর পর থেকেই জনবল সংকট প্রকট হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের বিষয়টি তিনি জানিয়েছেন। তবে জনবলসংকটের কারণে দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি তাঁর।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ভাটিয়ারীতে একটি আধুনিক ফায়ার স্টেশন করার জন্য এখনো জায়গা খুঁজছেন তাঁরা। এর জন্য অন্তত এক একর জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু মহাসড়কের পাশে জমি না পাওয়ায় স্টেশন করার প্রক্রিয়া থমকে আছে। জায়গা পেলেই স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে।