চা-বাগানের ডোবা-বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল শাপলা

ভোরের আলোয় ঝলমল করছে শাপলা ফুল। রোববার সকালে মৌলভীবাজারের দেওরাছড়া চা-বাগানের বাবন বিলেছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজার শহরতলির বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক পার হয়ে কালেঙ্গা সড়কটি চলে গেছে কমলগঞ্জের দেওরাছড়া চা-বাগানের দিকে। আঁকাবাঁকা হয়ে সড়কটি চা-বাগানের ভেতর দিয়ে গেছে। ওই সড়ক দিয়ে কিছুটা পথ পার হতেই একটি শাপলা বিলের দেখা পাওয়া যায়। যেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল শাপলা ঘোমটা খুলে ফুটে আছে। তারা হাসছে, তারা দুলছে।

রোববার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে দেওরাছড়া চা-বাগানের ছোট বাংলা এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে লাল শাপলার সঙ্গে দেখা। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল কবি বিনয় মজুমদারের কবিতার কিছু পঙ্‌ক্তি—‘বর্ষাকালে আমাদের পুকুরে শাপলা হয়, শীত গ্রীষ্মে এই/ পুকুর সম্পূর্ণ শুশক হয়ে যায় পুকুরের নিচে ঘাস গিজায় তখন— /পুকুরে শাপলা আর থাকে না, আবার সেই বর্ষাকাল আসে/ তখন পুকুরটিতে জল জমে পুনরায় শাপলা গজায়।’...

কবে বর্ষা অনেক জল ঝরিয়ে চলে গেছে, শরৎ ফুরিয়ে হেমন্ত চলে এসেছে। তবু সমতল ভূমিতে, পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ছোট ছোট কিছু ডোবা-বিলে এখনো পানি আছে। তবে পানি থাকলেই কি আর শাপলা ফুটে! সব বিলে তো আর শাপলা হয় না। সবখানে লাল শাপলাও নেই। এখানে, ওই দেওরাছড়া চা-বাগানের ছোট বাংলা এলাকায়, বাবন বিলে কিংবা চা-বাগানের কারখানার পুকুরে মানুষের ভালোবাসা পেয়ে এখনো অনেক শাপলা টিকে আছে।

বিলটি লাল শাপলায় ভরে আছে। চা-বাগানের ছোট বাংলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ছোট বাংলা এলাকার বিলটিতে অনেকগুলো শাপলা ফুটেছে। নির্লিপ্ত শান্তি ছড়িয়ে আছে লাল শাপলারা ডোবায়, বিলে। ঘুমভাঙা চোখ নিয়ে বাড়ির উঠান থেকে নেমে আসে দুটি শিশু। বড়টি ঝটপট বিলের হাঁটুপানিতে নেমে কয়েকটি শাপলা ফুল তুলে নিয়ে আসে। বোঝা যায়, এটা তাদের হয়তো প্রতিদিনের খেলার অংশ। বড়টি ছোট বোনের হাতে তুলে দেয় কয়েকটি ফুল। এখন এই ফুলগুলোই তাদের খেলার সাথি, কিছুটা সময় বন্ধু হয়ে থাকবে। ছোট বোনটি ফুল পেয়ে নির্মল, কোমল হাসিতে মুখ ভরিয়ে তোলে।

ছোট বাংলা এলাকার বিলটিতে অনেকগুলো শাপলা ফুটেছে
ছবি: প্রথম আলো

সেখান থেকে আরও কিছুটা দূরে, চা-বাগানের ভেতরের দিকে গেলে সড়কের পাশে আরেকটি ডোবার দেখা পাওয়া যায়। বাবন বিল এলাকার সেই ডোবাতেও থোকায় থোকায় অনেকগুলো লাল শাপলা ফুটে আছে। সেখানে কয়েকজন দাঁড়িয়ে ফুল দেখছেন। সেখানেই বলরাম উড়াংয়ের সঙ্গে দেখা। তিনি দেওরাছড়া চা-বাগানের লোক। ওই ডোবার পাশেই তাঁর বাড়ি।

বলরাম উড়াংসহ আরও কয়েকজন জানালেন, রাতের বেলায় শাপলা ফুটে, ফুল পাপড়ি মেলে। সকালবেলা ঝাঁকে ঝাঁকে ফুল দেখেন তাঁরা। এই ফুল দেখতে খুব সুন্দর লাগে। রোদ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে ফুলগুলো পাপড়ি বুঁজতে শুরু করে। দুপুরবেলা যেন তারা ঘোমটা টেনে ঘুমিয়ে পড়ে।