মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি, শিক্ষকের বেতন বন্ধ

ওই শিক্ষকের দাবি, তাঁর মেয়ে আবৃত্তি, বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়। কিন্তু এই স্কুলে এ ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নেই।

যশোর জেলার মানচিত্র

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত (মান্থলি পে-অর্ডার) এক শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেয়েকে নিজের বিদ্যালয় থেকে নিয়ে অন্য একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করায় তাঁর বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে ওই শিক্ষক অভিযোগ করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির কাছে বারবার ধরনা দিয়েও তিনি তাঁর বেতন ছাড় করাতে পারছেন না।

ওই শিক্ষকের নাম সুরেন্দ্রনাথ সিংহ। তিনি বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ওই শিক্ষকের দাবি, তাঁর মেয়ে আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চায়। কিন্তু এই স্কুলে এ ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নেই। এ কারণে সে এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে চায়নি।

জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিমা রানী লস্কর বলেন, ‘বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সহকারী শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সিংহের বেতন বন্ধ করেছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’ তাঁর বিদ্যালয়ে সহশিক্ষাক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই মেয়ে যা বলবে তাই হবে নাকি? মাঝেমধ্যে সহশিক্ষা কার্যক্রম হয়।

বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পরিমল গোলদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি সহকারী শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সিংহের বেতন বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি। আমি তাঁর বেতন বন্ধ করেছি। সবকিছু নিয়মের মধ্যে করা হয়েছে।’ বলেই তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সুরেন্দ্রনাথ সিংহ জানান, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বিদ্যালয়ে না এসে মেয়ে বাড়িতেই ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাঁকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। নোটিশে বিদ্যালয় পরিপন্থী আলোচনা ও কার্যকলাপের বিষয়ে তাঁর (সুরেন্দ্রনাথ) কাছে জবাব চাওয়া হয়। তিনি জবাব দেওয়ার পরও তাঁর ফেব্রুয়ারির বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ৯ মার্চ থেকে নিয়মিত হাজিরা খাতার পরিবর্তে আলাদা খাতায় তাঁর স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, কয়েকজন সদস্য এবং প্রধান শিক্ষকের কাছে বারবার বেতন ছাড়ের জন্য অনুরোধ জানানোর পর মার্চ থেকে তাঁর বেতন নিয়মিত করা হয়। তবে ফেব্রুয়ারির বেতন আর দেওয়া হয়নি। গত এপ্রিলে বিদ্যালয়ে মেয়ের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়ে তাঁকে দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি নোটিশের জবাব দেন। এরপর গত জুলাই থেকে পুনরায় তাঁর বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সুরেন্দ্রনাথ সিংহ আরও বলেন, ‘মেয়েটিকে অনেক বুঝিয়েছি। সে আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চায়। এসব কার্যক্রম না থাকায় সে বিদ্যালয়ে যেতে চায় না।

বোঝানোর সময় মেয়েটি অঝোরে কাঁদতে থাকে। একপর্যায়ে আমার স্ত্রী তাকে গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। আমি হার্টের রোগী, সঙ্গে ডায়াবেটিস। শরীর খুব খারাপ। দুই দিন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেছি। সংসারে অভাব। বেতন বন্ধ থাকায় কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। এখন আমার মরা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।’