মে দিবসে মেয়র আরিফুলের ‘মহড়া’, বক্তব্যে সিটি নির্বাচনে ইভিএমের বিরোধিতা

মহান মে দিবস উপলক্ষে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শোভাযাত্রা বের করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের সুরমা পয়েন্ট এলাকায়ছবি: আনিস মাহমুদ

মে দিবসকে সামনে রেখে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থক নিয়ে ‘মহড়া’ দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আজ সোমবার এই কর্মসূচি শেষে সিলেট সিটি নির্বাচনে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন তিনি।

এদিকে জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের অংশগ্রহণে মহান মে দিবস উপলক্ষে নগরে আরেকটি মিছিল হয়েছে। তবে সেখানে আরিফুলপন্থী বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের দেখা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে আরিফুল নিজের জনসমর্থন দেখাতেই পৃথকভাবে শোডাউন করেছেন। তবে তিনি আসলেই নির্বাচন করবেন কি না, এটা এখনো স্পষ্ট নয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ দুপুর ১২টায় নগরের রেজিস্টারি মাঠ থেকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌহাট্টা এলাকায় এক সমাবেশের মধ্য দিয়ে মিছিল শেষ হয়।

মিছিল চলাকালে রাস্তার দুই পাশের উপস্থিত জনতাসহ পথচারীদের উদ্দেশে হাত উঁচিয়ে শুভেচ্ছা জানান আরিফুল হক চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

মিছিল চলাকালে আরিফুল হক চৌধুরী হাত উঁচিয়ে রাস্তার দুই পাশের উপস্থিত জনতাসহ পথচারীদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা জানান। তিনি দুই হাত তুলে সবার কাছে দোয়া চাওয়ার ইশারাও দেন। মিছিলে আরিফুলের সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহক্ষুদ্রঋণ–বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, মহানগর বিএনপির সদ্যবিদায়ী আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খসরু, মহানগর হকার্স দলের সভাপতি নুরুল ইসলামসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আয়োজকেরা বলছেন, মহানগর শ্রমিক দলের উদ্যোগে এই মিছিল বের করা হয়।

মিছিল শেষে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চলছে। জাতি যেখানে ইভিএমে ভোট গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করেছে, সেখানে সিটি নির্বাচন ইভিএমে করার বিষয়টি রহস্যজনক।

আরও পড়ুন
মে দিবসের কর্মসূচিতে সিটি নির্বাচনে ইভিএমের বিরোধীতা করে বক্তব্য দেন আরিফুল হক চৌধুরী। আজ সোমবার দুপুরে সিলেট নগরের রেজিস্টারি মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

আরিফুল হক চৌধুরী ব্যালটে সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, ইভিএম হচ্ছে শুভংকরের ফাঁকি। মানুষ ভোট দেবে এক প্রতীকে, আর ভোট চলে যাবে আরেক প্রতীকে। একটা প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। জনগণ মনে করছে, এটা সাজানো-পাতানো নির্বাচন।

মিছিল ও সমাবেশ শেষে বেলা দুইটার দিকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সিটি নির্বাচন সামনে রেখেই এই মহড়া কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বলার সময় এখনো আসেনি। ২০ মে বেলা আড়াইটায় নগরের রেজিস্টারি মাঠে ৪২টি ওয়ার্ডের বাসিন্দা, দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জনসভা করে এ বিষয়ে আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব।’

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের কোর্ট পয়েন্ট থেকে সিলেট জেলা ও মহানগর শ্রমিক দলের উদ্যোগে মহান মে দিবস উপলক্ষে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে মিছিল বের করা হয়। নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে আম্বরখানা এলাকায় গিয়ে এক সমাবেশ হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সুরমান আলী।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।

আরও পড়ুন

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে তামাশা করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে বিএনপির চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে চায়। বিএনপি বিশ্বাস করে, দলের কোনো নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগের পাতানো ফাঁদে পা দেবে না। দলের কোনো নেতা-কর্মী এ সরকারের অধীন প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নিলে তা বরদাশত করা হবে না।

মেয়র আরিফুল হকের নেতৃত্বে পৃথক মিছিল সম্পর্কে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জেলা ও মহানগর শ্রমিক দল মিছিলের আয়োজন করেছে। এখানে জেলা ও মহানগরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ সব সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এখন কেউ যদি নিজের উদ্যোগে পৃথকভাবে মিছিলের আয়োজন করেন, এটি একান্তই তাঁর বিষয়। দলীয় কাঠামোর বাইরে যাওয়ার বিষয়টি সমীচীন বলে মনে করেন না তিনি।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৩ মে, বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন।

এ নির্বাচনে মেয়র পদে দলের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসানকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর বাইরে জাতীয় পার্টিসহ একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীও তৎপর আছেন।