জরাজীর্ণ ভবনে আতঙ্ক নিয়ে চিকিৎসাসেবা

রোগীদের দৃষ্টিতে হাসপাতালটিই রোগা, এটির চিকিৎসা হচ্ছে না। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভয়ে থাকতে হয়, কখন ছাদ ভেঙে পড়ে!

জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। খসে পড়ছে পলেস্তারা। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেয়াল, জমেছে শেওলা। খসে পড়ছে ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা। বেরিয়ে আছে ছাদের বিমের রড। এমনই চিত্র মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেটির। এর মধ্যে আতঙ্ক নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির চিকিৎসক ও কর্মীরা।

স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ১৯৮১ সালে এ ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। সব বয়সের নারী-পুরুষকে জ্বর-সর্দি, কাশি, চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিশু, গর্ভবতী নারী, কিশোর-কিশোরীরদের জন্য রয়েছে বিশেষ সেবা। প্রতিদিন ৪০-৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। মাসের যে সপ্তাহে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধ আসে, সে সময় প্রতিদিন শতাধিক রোগী হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, চার কক্ষবিশিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির জরাজীর্ণ ভবনের দেয়ালে ও ছাদে শেওলা জমে আছে। রোগীদের জন্য অপেক্ষার কক্ষটির ছাদের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে আছে। দক্ষিণ পাশের একটি কক্ষে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভাঙা আসবাবপত্র স্তূপ করে রাখা হয়েছে। অন্য দুটি কক্ষে দুজন চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ সময় কয়েকজন রোগী বলেন, তাঁদের দৃষ্টিতে হাসপাতালটি রোগা, এটির চিকিৎসা হচ্ছে না। চিকিৎসা করতে এসে ভয়ে থাকতে হয়। কখন ছাদ ভেঙে মাথার ওপর পড়ে!

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটিমাত্র শৌচাগার। সেটিরও দরজা ভাঙা, নেই পানির ব্যবস্থা। জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসক, রোগী সবাইকে বিপাকে পড়তে হয়। ভবনের দূরাবস্থার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রোগীদের ভালো চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানান স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা খান মজিবুর রহমান।

মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এবং চিকিৎসাসেবার পরিধি আরও বাড়াতে জরাজীর্ণ ভবনের দক্ষিণ পাশেই দুতলা একটি নতুন ভবন করা হচ্ছে। ভবনটি ২০২১ সালে হস্তান্তরের কথা ছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফেলতির কারণে তিন দফা মেয়াদ শেষে হলেও ভবন নির্মাণ শেষ হয়নি।

মুন্সিগঞ্জ প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মেসার্স নিয়াজ ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চরকেওয়ার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নির্মাণকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষে ভবন হস্তান্তরের কথা ছিল। এরপর তিন দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আবারও সময় নিয়েছে তারা।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিক সৈয়দ লামীম হাসান নিলয় বলেন, যেখানে নতুন ভবন করা হচ্ছে, সেখানে পুরোনো একটি ভবন ছিল। সেটি ভেঙে বুঝিয়ে দিতে সংশ্লিষ্টরা এক বছর দেরি করেছে। এ ছাড়া করোনা, বর্ষা মৌসুম এবং ওই এলাকার সড়ক খারাপ ছিল। এ জন্য মালামাল আনা-নেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সব মিলিয়ে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। শুধু বিদ্যুৎ–সংযোগ বাকি আছে। শিগগিরই ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

সরেজমিনে নতুন ভবনে ঢোকার মূল ফটকটি তালাবদ্ধ দেখা যায়। ভবনের কাজ নিয়ে অভিযোগ করেন স্থানীয় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মীরা। তাঁরা জানান, জলছাদের কাজে রড দেওয়ার কথা ছিল। ঢালাইয়ের দিন যখন প্রকৌশলী কাজ পরিদর্শনে আসেন, তখন পর্যন্ত রড বিছানো ছিল। প্রকৌশলী যাওয়ার পর রড তুলে ঢালাই দেয় ঠিকাদারের লোকজন।

অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, ‘রড উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। সিডিও মোতাবেক যথাযথভাবে কাজ হয়েছে।’

নতুন ভবনের এখনো ১৫ ভাগ কাজ বাকি আছে জানিয়ে মুন্সিগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী কে এম সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ঠিকাদারকে তাঁদের পাওনার ৬০ ভাগ টাকা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে কাজ শেষে ভবন বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এ জন্য তাঁদের কয়েকবার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কাজ বুঝিয়ে না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।