ভোটারদের মুখে মুখে চাউর হচ্ছে ‘ইশারা-ইঙ্গিত’ শব্দ দুটি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনপ্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ প্রার্থীর চারজনই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। একজন যুবদল নেতা। ভোটের আর মাত্র দুই দিন বাকি। শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী মাঠে ভোটারদের মুখে মুখে ‘ইশারা-ইঙ্গিত’ শব্দ দুটি বেশ চাউর হচ্ছে।

ইশারা-ইঙ্গিত বলতে কোনো এক প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসানের পরোক্ষ সমর্থনকে বোঝানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই আলোচনার প্রভাব থাকবে নির্বাচনী ফলাফলেও।

প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর প্রতীক ঘোড়া। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর লড়ছেন কাপ পিরিচ প্রতীক নিয়ে। আওয়ামী লীগের সদস্য মোশতাক আহমেদের প্রতীক কই মাছ। আর আনারস প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অলিউল ইসলাম। উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব আল মামুনের প্রতীক মোটরসাইকেল। তবে ভোটের মাত্র চার দিন আগে গত শুক্রবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন অলিউল ইসলাম। সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণকে সামনে আনা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, দলের অপর তিন প্রার্থীর কোনো একজনের পক্ষে তিনি সমর্থন জানাবেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করেননি।

ভৈরব-কুলিয়াচর নিয়ে সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৬। এ আসন থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে ছয়বার সংসদ সদস্য হন। বর্তমানে তাঁর ছেলে নাজমুল হাসান টানা চারবারের সংসদ সদস্য। স্বাধীনতা-পূর্ব সময় থেকে সেখানে আওয়ামী নেতৃত্বে পরিবারটির একক নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। বর্তমানে যেকোনো নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীরা সবার আগে নাজমুল হাসানের আশীর্বাদ গ্রহণের চেষ্টা করেন। এবারও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু মন্ত্রী এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করেননি। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রীর দৃশ্যমান অবস্থান না থাকলেও প্রার্থীরা তাঁকে ঘিরে নির্বাচনী মাঠ গরম করে তুলেছেন। বিশেষ করে ঘোড়া প্রতীকের জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকদের দাবি, মন্ত্রীর ইশারা-ইঙ্গিত দুই-ই এখন ঘোড়ার পক্ষে। কিছু উপসর্গ সামনে এনে কেবল নির্বাচনী জনসভায় নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দাবির পক্ষে এখন পক্ষটি আত্মবিশ্বাসী মনোভাব প্রকাশ করে চলেছে।

এমন ইঙ্গিতে বিশ্বাস রেখে দলের অনেক নেতা নীরবতা ভেঙে ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়েছেন। তবে ঘোড়ার সমর্থকদের এই দাবি ভুয়া প্রমাণে, বিশেষ করে আবুল মনসুর ও তাঁর সমর্থকেরা তৎপর রয়েছেন। অলিউল ইসলাম ও মোশতাক আহমেদ দাবিটি মানতে নারাজ।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, বর্তমানে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা আর নীরব নেই। বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ নেতারা ঘোড়া এবং কাপ পিরিচে বিভক্ত হয়ে মাঠে আছেন। নেতাদের কাছে নির্বাচনটি আর কেবল চেয়ারম্যান পদে সীমাবদ্ধ নেই। বিশেষ করে কাপ পিরিচ ও ঘোড়ার জয়-পরাজয়ের মধ্যে দলের ভবিষ্যতের নেতৃত্ব ঝুলে আছে। মনে করা হচ্ছে, কাপ পিরিচ জয় পেলে বর্তমান নেতৃত্ব বড় ধাক্কা খাবে। ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনে তাঁরা ছিটকে পড়তে পারেন। আবার ঘোড়ার জয় বর্তমান নেতৃত্বকে শক্ত ভিত দেবে। ফলে এই নির্বাচন এখন অনেক হিসাব-নিকাশের নির্বাচন হয়ে উঠেছে।

ভৈরব পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম বাকী বিল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ শেষ সময়ে পৌর কমিটির বড় একটি অংশ নিয়ে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে সরব হয়েছেন। নির্বাচনী সভায় তাঁরা ঘোড়ায় সওয়ার হওয়ার পক্ষে যুক্তি হিসেবে মন্ত্রীর ইশারা-ইঙ্গিতকে সামনে আনছেন। আতিক আহমেদ বলেন, ‘আমি আছি পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। ফলে আমার অবস্থান মূলধারায়। এ ছাড়া আরও অনেক হিসাব-নিকাশ তো আছেই।’

কাপ পিরিচের হয়ে এরই মধ্যে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র ইফতেখার হোসেন। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর ইশারা-ইঙ্গিত কেবল কয়েকজন নেতার জন্য? কই, আমি তো পেলাম না।’ তিনি আরও বলেন, ‘২৪ মে মন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি (মন্ত্রী) স্পষ্ট করে বলেছেন, কারও পক্ষে তাঁর ইশারা-ইঙ্গিত নেই। মন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ভোটে ফায়দা পাওয়ার চেষ্টা করছে ঘোড়া।

এই উপজেলায় এবার ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। চতুর্থ দফায় ৫ জুন ভৈরব উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।