লঞ্চে দুই তরুণীকে মারধরের ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হুমকি
মুন্সিগঞ্জ শহরের লঞ্চঘাটে দুই তরুণীকে মারধরের ঘটনায় নেহাল আহমেদ নামের তরুণকে আটকের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে ঢুকে এক সাংবাদিককে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
যাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাঁর নাম শিহাব আহমেদ। তিনি দৈনিক বাংলার মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি এবং স্থানীয় একটি অনলাইন পোর্টালের প্রকাশক ও সম্পাদক। হুমকিদাতার নাম মারুফ মোল্লা (২৪)। তিনি মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার নয়াকান্দি এলাকার ওমর ফারুকের (মিন্টু) ছেলে। এ সময় মারুফের সঙ্গে আরও চার-পাঁচজন যুবক ছিলেন।
শিহাব আহমেদ বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার রাতে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে দুই তরুণীকে মারধরের ঘটনায় অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ করেছি। অভিযুক্ত আটকের ঘটনায়ও সংবাদ করেছি। আলোচিত ঘটনার সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মারুফ মোল্লা নামের ওই যুবক তিন থেকে চারটি মোটরসাইকেলে করে এসে আমাকেসহ উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে নিউজ কীভাবে করতে হবে, সেটাও বলে যান।’
এ সময় মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুজন হায়দার (জনি), সাবেক সভাপতি শহীদ-ই-হাসান (তুহিন), সাবেক সভাপতি রাসেল মাহমুদ, সাবেক সভাপতি কাজী সাব্বির আহমেদ (দীপু), যমুনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি আরাফাত রায়হান (সাকিব), চ্যানেল ২৪–এর জেলা প্রতিনিধি শুভ ঘোষ, নাগরিক টেলিভিশনের প্রতিনিধি জুয়েল রানা, বাংলা টিভির প্রতিনিধি রুবেল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসক্লাবে উপস্থিত কয়েকজন সংবাদকর্মী আক্ষেপ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সময়ে তাঁরা সংবাদ পরিবেশন করেছেন। ওই সময়ও ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কেউ প্রেসক্লাবে এসে হুমকি দেওয়ার সাহস পাননি। ক্লাবে এসে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার এবং দুঃখের।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে হুমকি দেয়ার ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। অভিযুক্তকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
অভিযোগের বিষয়ে মারুফ মোল্লা বলেন, ‘শিহাব আহমেদ আমার ছোট বোনের স্বামী। তার সঙ্গে আমার একটি পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তার অনলাইন পোর্টালে লঞ্চের তরুণীকে মারধরের ঘটনায় যে সংবাদ প্রকাশ করেছিল, সেখানে কিছু সংশোধনী ছিল। কিছু সত্য তথ্য বাদ পড়েছিল। আত্মীয়তার সম্পর্কের খাতিরে আমি ওর (শিহাব আহমেদ) সঙ্গে সে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কোনো ধরনের হুমকি তো দূরের কথা, ওর সঙ্গে আমার কোনো মনোমালিন্য হয়নি।’
মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে গতকাল শুক্রবার রাতে যাত্রাবিরতির জন্য থামা একটি লঞ্চে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় শনিবার দুপুরে নেহাল আহমেদ ওরফে জিহাদ নামের এক তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। আটক নেহাল আহমেদ মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ বলছে, এমভি ক্যাপ্টেন নামের লঞ্চে মারধরের শিকার ওই দুই তরুণীর বয়স ১৯-২০ বছর হবে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই তরুণীকে লঞ্চের একেবারে সামনের অংশে উঠিয়ে বেল্ট দিয়ে পেটাচ্ছেন এক তরুণ। এ সময় স্থানীয় লোকজন সেই দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে উল্লাস করছিলেন ও বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন।