শরীয়তপুরের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতার ওপর হামলা, আসবাব ভাঙচুর

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল আউয়াল শামীম ও তাঁর সমর্থদের ওপর সোমবার রাতে হামলা হয়েছে। এ সময় ডামুড্যা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল আউয়ালের ওপর হামলা করার অভিযোগ উঠেছে ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। সোমবার রাত আটটার দিকে ডামুড্যা উপজেলা পরিষদে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারীরা উপজেলা পরিষদের আসবাব ভাঙচুর করেন।

গতকাল সোমবার আবদুল আউয়াল শরীয়তপুর–৩ সংসদী এলাকার (ডামুড্যা, গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জের আংশিক) বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করছিলেন। ডামুড্যা উপজেলার পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে গেলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা ওই আসনের সংসদসদস্য নাহিম রাজ্জাকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ডামুড্যা থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল আউয়াল শামীমের বাড়ি ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামে। তিনি দুর্গাপূজা উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে আসেন। রোববার থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার জন্য বিভিন্ন মন্দিরে যাচ্ছিলেন। সোমবার দুপুরে তিনি গোসাইরহাট উপজেলার বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন ও মতবিনিময় করেন। সন্ধ্যার পর ডামুড্যার বিভিন্ন মন্দিরে যাওয়ার জন্য উপজেলা সদরে আসেন। ডামুড্যা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের আমন্ত্রণে উপজেলা পরিষদে যান তিনি।

রাত ৮টার দিকে সংসদসদস্য নাহিম রাজ্জাকের অনুসারী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক বাচ্চু মাদবর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক জুলহাস মাদবরের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা-কর্মী উপজেলা পরিষদে হামলা করেন। তাঁরা আবদুল আউয়াল ও তাঁর কয়েকজন সমর্থককে মারধর করেন। এ সময় আবদুল আউয়াল ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনকে গালিগালাজ করে আসবাব ভাঙচুর করা হয়। তাঁদের উপজেলা পরিষদে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপদে অন্য স্থানে পৌঁছে দেয়।

আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আউয়াল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে দলীয় সভাপতি নেত্রী শেখ হাসিনার শারদীয় শুভেচ্ছা পৌঁছে দিতে বিভিন্ন মন্দিরে গিয়েছিলাম। আমি শরীয়তপুর–৩ নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার বিষয়টি ওই এলাকার সংসদসদস্য নাহিম রাজ্জাককে জানিয়েছি। তারপরও তাঁর অনুসারীরা আমার ওপর হামলা করেছেন। লোকজনকে মারধর করেছেন। বিষয়টি আমি আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের ও মীর্জা আজম ভাইকে জানিয়েছি। তাঁরা বলেছেন, সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন।’

ডামুড্যা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শনে যাবেন, এতে কেউ ঈর্ষান্বিত হবেন, এটা কেমন রাজনীতি? আমাকে নিয়ে ডামুড্যার মন্দিরগুলোয় যাওয়ার কথা। সেখানে যাওয়ার আগে আমার দপ্তরে একটু চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। এ জন্য আমার কার্যালয়ের আসবাব পর্যন্ত ভাঙচুর করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা দলীয় ফোরামে সাংগঠনিকভাবে মোকাবিলা করা হবে, তাই কোনো আইনগত পদক্ষেপ নিইনি।’

জানতে চাইলে ডামুড্যা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু মাদবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েকজন লোক উপজেলা পরিষদে জড়ো হয়ে সংসদসদস্য নাহিম রাজ্জাকের বিরুদ্ধে মিটিং করছিলেন। তাই আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা সেখানে জড়োয়েছিলেন। কাউকে মারধর বা ভাংচুর করা হয়নি।’

সংসদসদস্য নাহিম রাজ্জাক মুঠোফোনে ফোন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল পূজামণ্ডপে যাওয়ার কথা ফোন করে আমাকে জানিয়েছিলেন। তিনি উপজেলা পরিষদে মিটিং করবেন, সেটা বলেননি। সেখানে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তা তদন্ত করার জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার জন্য আবদুল আউয়াল সাহেবের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন,‘আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে কী হয়েছিল, তা আমরা জানি না। ঝামেলা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে দুই পক্ষকে দুই দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে পুলিশ প্রহরায় ভেদরগঞ্জের বুড়িরহাট এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’