‘যাদের সঙ্গে আমার ছেলের ওঠাবসা, তারাই তাকে এভাবে হত্যা করল’

খুন হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী জিয়াউল হাসানছবি: সংগৃহীত

মিরসরাই উপজেলায় মাটি বিক্রি, ইট ও বালু ব্যবসা এবং মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী জিয়াউল হাসানের সঙ্গে তাঁর বন্ধুদের বিরোধ ছিল। এর জেরে গতকাল বুধবার রাতে বাঁ পা কেটে ও বুকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় জিয়াউলকে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে জিয়াউলের বন্ধু ও একই উপজেলার বাসিন্দা মো. ইউনুস, আবুল বশর, ওমর ফারুক ও রিয়াদ হোসেনের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় হতবাক জিয়াউলের পরিবার। বন্ধুরাই এমন নৃশংসভাবে ছেলেকে খুন করেছে, তা বিশ্বাস করতে পারছেন না জিয়াউলের বাবা মো. আলমগীরও। তিনি বলেন, ‘এক বছর আগেও এলাকায় জিয়াউলের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল ইউনুস, রিয়াদ ও ফারুকের। যাদের সঙ্গে আমার ছেলের ওঠাবসা, তারাই তাকে এভাবে হত্যা করল।’

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জিয়াউলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ঘরে একটি খাটে বসে ছেলের জন্য বিলাপ করছেন তাঁর মা জোসনে আরা বেগম। পাড়াপ্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তাঁকে। বিলাপ করে জোসনে আরা বলেন, ‘আমার চার ছেলের সবার বড় জিয়াউল। কী দোষে তোর জীবন নিল, বাপ। কষ্ট দিয়ে ওরা তোরে মারল রে, বাপ।’ এ সময় তিনি ছেলের খুনিদের সবার ফাঁসি চান।

স্থানীয় লোকজন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা জানান, খুন হওয়া জিয়াউল ও খুনিদের সবাই মূলত রাজনৈতিক আশ্রয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসা ও নানা অপকর্ম করত। ইট-বালু-মাটি বিক্রি ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে আট মাস আগে ইউনুস ও রিয়াদকে মারধর করেন জিয়াউল হাসান। এরপর জিয়াউল হাসানের বাড়িতে কয়েক দফায় হামলা করেন তাঁরা। বনিবনা না হওয়ায় ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে খুন করা হয় জিয়াউল হাসানকে।

ছেলেকে হারিয়ে আহাজারি করছেন জিয়াউল হাসানের মা জোসনে আরা বেগম। আজ সকালে মিরসরাইয়ের হাদিমুছা এলাকায়
ছবি: ইকবাল হোসেন।

জিয়াউল হাসান মিরসরাই উপজেলার মিঠানলা ইউনিয়নের হাদিমুসা এলাকার মো. আলমগীরের ছেলে। অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে মিঠানলা ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি ইউনুসের বাবা আবুল বশর। ওমর ফারুক ইউনুসের খালাতো ভাই। রিয়াদ হোসেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

এ বিষয়ে মিঠানলা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবু নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত জিয়াউল হাসান ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। ইউনুস ও রিয়াদ যুবলীগের রাজনীতি করত। খুনের ঘটনাটি আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক।’

এ বিষয়ে মিরসরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক দীপ্তেশ রায় প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত জিয়াউলের নামে থানায় বিভিন্ন অপরাধে পাঁচটি, ইউনুসের নামে একটি ও রিয়াদের নামে একটি মামলা রয়েছে। হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মামলা না হলেও তদন্তকাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে।