‘সন্তানদের কথা ভেবে মুরগি কিনেছি’

চট্টগ্রামের বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ২৫০ টাকার কাছাকাছি। আজ সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী এলাকার ঈশান মহাজন সড়কেছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী এলাকায় বাজার করতে এসেছেন রেশমি আক্তার। সন্তানদের জন্য মুরগি কিনতে এসেছেন তিনি। তবে বাজারে সবকিছুর উচ্চ মূল্য থাকায় হতাশ হতে হচ্ছে তাঁকে। আজ শুক্রবার সকালে উত্তর কাট্টলী এলাকায় ঈশান মহাজন সড়কে মুরগির দোকানের সামনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

পোশাকশ্রমিক রেশমি আক্তার বলেন, বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ২৫০ টাকার কাছাকাছি। এই দামে মুরগি কিনে খাওয়া মধ্যবিত্তদের জন্যই কষ্টসাধ্য। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অসম্ভবের কাছাকাছি। স্বল্প আয়ে স্বামী-স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে কষ্টে সংসার চলছে। নিজেরা না খেয়ে থাকতে পারলেও সন্তানদের কথা ভেবে মুরগি কিনেছেন তিনি।

রমজান মাসকে কেন্দ্র করে বাজার করতে শুরু করেছেন অনেকেই। তবে বাজার করতে গিয়ে এখনো স্বস্তি পাচ্ছেন না নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি পেলেও মাছ-মাংসের বাজারে গিয়েই হতাশ হতে হচ্ছে এখনো।

নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার ও উত্তর কাট্টলী এলাকায় বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেল, বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়, সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৪০, দেশি মুরগি ৫৩০ থেকে ৫৫০, হাড়ছাড়া গরুর মাংস ৮০০ থেকে ৮৫০, হাড়সহ গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ ও খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকায়। মাংসের উচ্চ মূল্যের পাশাপাশি মাছের বাজারও চড়া নগরে। বাজারে আকারভেদে রুই ২৫০ থেকে ৩০০, কাতলা ২৩০ থেকে ৩২০, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২৫০, রূপচাঁদা ৫৫০ থেকে ৭৫০, পোয়া ১৯০ থেকে ২৯০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী এলাকার ঈশান মহাজন সড়কে মাছের বাজার
ছবি: জুয়েল শীল

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক বছরে (৯ মার্চ ২০২২ থেকে ৯ মার্চ ২০২৩) গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। ছাগলের মাংসের দাম বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। বিভিন্ন প্রকার মাছের দাম বেড়েছে অন্তত ১৫ শতাংশ।

চকবাজার সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারে মাছ কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নুরুল আজম বলেন, মাংসের দাম বাড়তি। ভালো মানের মাছও ২৫০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। মসলা ও অন্যান্য পণ্যের দামও অস্থিতিশীল। তিনি বলেন, রমজানকে সামনে রেখে এখন অনেকেই বাজার করবেন। অন্তত রমজানে যাতে মানুষের হাতের নাগালে দাম থাকে।

চট্টগ্রামে নিম্ন ও মধ্য আয়ের অধিকাংশ মানুষ বাজার করেন চকবাজার ও বহদ্দারহাট বাজার থেকে। তাঁদের জন্য এই দুই বাজারে টুকরা করে মুরগির মাংস ও চকবাজারে ন্যূনতম ২৫০ গ্রাম গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। তবে সংকোচ থেকে অনেকে বলতে পারছেন না অল্প পরিমাণে মাংস কেনার কথা। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কয়েকজন টুকরা হিসেবে মুরগির মাংস ও ২৫০ গ্রাম পরিমাণে গরুর মাংস নিয়ে গেছেন। তবে সংকোচের কারণে বাজারে ভিড় কম থাকা অবস্থায় তাঁরা কিনেছেন।

সবজির বাজার। চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী এলাকার ঈশান মহাজন সড়ক থেকে তোলা
ছবি: জুয়েল শীল

মাছ-মাংসের বাজার ঘুরে সবজি বাজারেই ভিড় করছেন বাজার করতে আসা ক্রেতারা। সবজির বাজারে বেগুন ২৫ থেকে ৩৫, মুখিকচু ৫০ থেকে ৬০, বাঁধাকপি ১৫ থেকে ২০, ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০, শসা ২৫ থেকে ৩৫, মিষ্টিকুমড়া ৩০ থেকে ৩৫, পাকা টমেটো ২০ থেকে ২৫, কাঁচা পেঁপে ২৫ থেকে ৩০, শিম ৩৫ থেকে ৪৫, গাজর ২০ থেকে ২৫, মুলা ১৫ থেকে ১৮, লাউ ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আলু ২০ থেকে ২২ টাকায় কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যান্য নিত্যপণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১১০ থেকে ১১৫, দেশি মসুরের ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০, আমদানি করা মসুর ১৪০ থেকে ১৪৫, মানভেদে ছোলা ৮৫ থেকে ৯০, মটর ডাল ৬২ থেকে ৬৮, প্যাকেটজাত আটা ৬৫ থেকে ৬৮, খোলা আটা ৫৬ থেকে ৫৮, প্যাকেটজাত ময়দা ৭৫ থেকে ৭৮, খোলা ময়দা ৬২ থেকে ৬৫, পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০, দেশি রসুন ৯৫ থেকে ১০০, আমদানি করা রসুন ১২০ থেকে ১৩০ এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭২ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে বাজার ঘুরে অধিকাংশ দোকানে দেখা মেলেনি নির্দিষ্ট মূল্যতালিকার। এর ফলে একেক বাজারে একেক রকম দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রমজানের আগে সিটি করপোরেশনের বাজারগুলোতে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। রমজানে যাতে মানুষের ভোগান্তি না হয়, সেই অনুযায়ী বাজারগুলো মনিটরিং করা হবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে।