বিএনপির সাবেক নেতাকে প্রার্থী ঘোষণা করলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য

আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ হোসেন (বাঁয়ে) ও বিএনপির সাবেক নেতা আসাদুজ্জামান
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নেত্রকোনার পূর্বধলায় বিএনপির সাবেক নেতা শিল্পপতি আসাদুজ্জামান ওরফে নয়নকে সমর্থন দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহমদ হোসেন। গত শনিবার রাতে পূর্বধলার সরিস্তলা এলাকায় একটি ওরস মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার সময় সংসদ সদস্য ওই নেতাকে পাশে দাঁড় করিয়ে প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

আসাদুজ্জামান বিএনপির সহযোগী সংগঠন তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। পেশায় ব্যবসায়ী ওই ব্যক্তি এলাকায় বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিত। শনিবার রাতে সংসদ সদস্য তাঁকে পছন্দের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেন। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

ভিডিওতে আহমদ হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা কি চেয়ারম্যান চাই?’ তখন উপস্থিত লোকজন বলেন, ‘হ্যাঁ।’ এরপর তিনি বলেন, ‘কোন চেয়ারম্যান চাই আমরা? পাবলিকের টাকা মাইরা খায়, প্রতারণা করে, বেইমানি করে—এমন চেয়ারম্যান চাই না।’ এ সময় আসাদুজ্জামানের হাত উঁচু করে ধরে সংসদ সদস্য বলেন, ‘এই নয়ন আসবে টাকা নিবে না, সে টাকা দিবে। আমাকে এমপি বানাইছেন আপনারা! আমার একটা সহযোগী লাগবে না? কী? মেসি কি একা একা গোল করতে পারে? টিম লাগে না? কাজেই চেয়ারম্যানটাও আমার টিমের নয়ন। তাঁরে আমি চাই। নয়নকে আগে আপনারা চিনেন। চেয়ারম্যানটা আমার টিমের হইতে নয়নরে দিয়া কাজ হবে। আমি এমপি থাকলে, নয়ন ভালো চেয়ারম্যান হবে।’

৩ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে সংসদ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এমপি, আমি জেলা পরিষদের অ্যাডভাইজার। সব কমিটির আমি প্রধান। সবকিছু আমার অ্যাডভাইসে চলবে। আমাকে কাজ করতে দেবেন? তাহলে নয়ন যে মার্কা নিয়ে আসবে, তাঁকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান বানাতে হবে। আমি এমপি। নয়নকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই। ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য আমার একজন নয়নের দরকার...।’

এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান নয়নের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। জানতে চাইলে আহমদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সরাসরি কাউকে সমর্থন দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে মৌন সমর্থন তো থাকতেই পারে। এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি। তফসিল ঘোষণা হলে আমি কারও পক্ষে কথা বলব না।’ আসাদুজ্জামানের তাঁতী দলের কমিটিতে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এমন তো আরও অনেকেই আছেন। তাতে সমস্যা কী?’

বিএনপির সাবেক নেতাকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের সমর্থন দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মন্তব্য করতে রাজি না হলেও উপজেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা মন্তব্য করেছেন।

এক সময় এলাকায় বিএনপির পক্ষে পোস্টারিং করা আসাদুজ্জামান এবার আহমদ হোসেনের ছবি দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দোয়া চেয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন
ছবি: সংগৃহীত

পূর্বধলা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আহমদ হোসেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের টানা পাঁচবারের সাংগঠনিক সম্পাদক। একজন পদবিধারী নেতা ও সংসদ সদস্য এভাবে প্রকাশ্যে কাউকে সভা-সেমিনারে নিজের প্রার্থী বলে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন না। আসাদুজ্জামান তো বিএনপির সহযোগী সংগঠন তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার ছবি দিয়ে এলাকায় পোস্টারও আছে। এখন আহমদ হোসেনের ছবি দিয়ে তিনি এলাকায় শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন বলেন, ‘আসাদুজ্জামান নয়নকে আমরা বিএনপির নেতা হিসেবে চিনি। তাঁকে এমপিসাব এভাবে নিজের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।’

সারা দেশের ৬৪টি জেলায় ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদে এবার ৪ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৬১টি, তৃতীয় ধাপে ৭৭টি ও চতুর্থ ধাপে ৩৮টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ আগামী ৮ মে, দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে। বাকি দুই ধাপের এখনো তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। পূর্বধলায় দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।