মশার উৎপাত, প্রকাশ্যে চলে মাদক কেনাবেচা

সন্ধ্যার পর ঝাঁকে ঝাঁকে মশা বাসাবাড়িতে ঢোকে। মশার উৎপাতে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। আছে মাদকসহ অনেক সমস্যা।

নালায় জমে আছে ময়লা-আবর্জনা। এসব থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা। সম্প্রতি ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের হিমারদীঘি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ। দিনে ও রাতে সমানতালে মশার উপদ্রপ। মশার যন্ত্রণায় কোথাও বসে থাকা যায় না। সন্ধ্যা হলেই ঝেঁকে ধরে মশা। বাসিন্দারা মশকনিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো ও মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার দাবি জানিয়ে এলে কাজ হচ্ছে না।

নগরের হিমারদিঘি ও শৈলারগাতি এলাকা নিয়ে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। গাজীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, এখানে মোট ভোটার ১২ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৬২৩ ও নারী ভোটারসংখ্যা ৬ হাজার ১০। এর বাইরে ওয়ার্ডটিতে কর্মক্ষেত্র সূত্রে অনেক মানুষের বসবাস। ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম ওরফে নুরু।

বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যা না নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা তাঁদের বসতবাড়িতে ঢুকে পড়ে। দরজা-জানালা বন্ধ করেও রেহাই পাওয়া যায় না। মশার যন্ত্রণায় অনেকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মশারি টানানোর পাশাপাশি কয়েল জ্বালিয়েও মশার উপদ্রব কমানো যাচ্ছে না। দিনের বেলায়ও কোনো কোনো জায়গায় মশার যন্ত্রণায় দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ওয়ার্ডের হিমারদিঘি মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার ঝোপঝাড়, আবর্জনার স্তূপ নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এসব কারণে মশা ব্যাপকভাবে প্রজনন করছে। এসব জায়গায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো ওষুধ ছিটানো হয় না। এসব কারণে মশার যন্ত্রণা ক্রমেই বাড়ছে। সন্ধ্যা হলে ঘরে টিকে থাকাটাই কঠিন।

ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। সবাই ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করছেন মশার উপদ্রপকে। এর বাইরে আছে সুপেয় পানির সংকট, এবড়োখেবড়ো রাস্তাঘাট, জলাবদ্ধতা, মাদকের ছড়াছড়ি ও খেলার মাঠ না থাকাসহ নানা সমস্যা। বাসিন্দাদের দাবি, ওয়ার্ডটির বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা চলে। মাদক ব্যবসায়ীদের ভয়ে আতঙ্ক এলাকাবাসীদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় চলছে পয়োনিষ্কাশন নালা নির্মাণের কাজ। কিছু কাজ এখনো অসম্পন্ন। কোথাও কোথাও খোলা পড়ে আছে নির্মাণাধীন নালা। সেসব নালায় জমে আছে নোংরা পানি। কোথাও কোথাও জমে আছে ময়লা-আবর্জনা। সেসব থেকে উড়ছে মশা-মাছি। ওয়ার্ডটির কোথাও খেলার মাঠ না থাকায় একধরনের ঘরবন্দী অবস্থায় আছে শিশুরা।

ওই ওয়ার্ডের ভোটার ইকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, খেলার মাঠ বাসিন্দাদের জন্য খুবই জরুরি। শিশু-কিশোর বা রোগীদের হাঁটাচলার জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে সে ব্যবস্থা নেই। এসব কারণে সবাইকে একধরনের ঘরবন্দী থাকতে হয়। একটু হাঁটাচলা বা বিশুদ্ধ বাতাস যে পাবে, তারও উপায় নেই। ইকরামের দাবি, তাঁরা শুধু নামেই সিটি করপোরেশন এলাকায় আছেন, কাজে না।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচনের কার্যক্রম চলছে। ভোট ২৫ মে। ওয়ার্ডটিতে এরই মধ্যে বইছে নির্বাচনী ঢামাডোল। ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে এবার কাউন্সিলর পদে মোট সাতজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরুও। অন্যদের মধ্যে আছেন সোহেল রানা, মাজহারুল ইসলাম (বাবলু), রঞ্জুরুল ইসলাম (রঞ্জু), লিটন মহাজন, কাইয়ুম সরকার ও  শাহিনুর ইসলাম।

ভোটাররা বলছেন, নির্বাচন এলেই প্রার্থীরা সরব হয়ে উঠেন। ভোট চাইতে দ্বারে দ্বারে যান। দেন নানা প্রতিশ্রুতি, কিন্তু নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে সেসবের কোনো খোঁজ থাকে না। স্থানীয় লোকজন জানান, গত নির্বাচনে (২০১৮ সাল) বর্তমান কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবে সেসবের কিছুই হয়নি।

নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারা নিয়ে কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী আমাদের মশার ওষুধ নেই। তাই অনেক ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের চাহিদামতো ওষুধ দিতে পারি না। আর মাদকের সমস্যা আছে, এটা সত্য। আমি সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করি, মাদকের ছড়াছড়ি কমানোর চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পেরে উঠি না। এর বাইরে যেসব নাগরিক অসুবিধার কথা বলা হচ্ছে, তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।’